ত্রিপুরাদের নবান্ন উৎসব দেখে সম্মোহিত যুক্তরাজ্যের পর্যটক ইরিনা

ত্রিপুরাদের নবান্ন উৎসব দেখতে আসা অতিথিদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের পর্যটক ইরিনা। আজ সকালে বান্দরবানের হাতিভাঙ্গা পাড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

বান্দরবান-চিম্বুক সড়ক ধরে পাঁচ কিলোমিটার গেলে পাহাড়ঘেরা গ্রাম হাতিভাঙ্গা। গ্রামের এক পাশের সুউচ্চ নীলাচলের পাহাড়। অপূর্ব নিসর্গঘেরা গ্রামটির কাছে যেতেই ঢোল-মাদলের শব্দ কানে এল। গ্রামের প্রবেশপথে পর্যটকদের সারি সারি গাড়ি। অনেকে এসেছেন হেঁটে। গ্রামের বড় আঙিনা আর হলঘরজুড়ে বসেছে ত্রিপুরা গান আর নাচের আসর। সঙ্গে পরিবেশন করা হচ্ছিল ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলি ও খাবারদাবার। এমন আয়োজন দেখে অবাক যুক্তরাজ্যের পর্যটক ইরিনা ক্ষণে ক্ষণে ছবি তুলছিলেন। কাউকে পেলে গানের কথা বুঝে নিতে চাইছেন। এক ফাঁকে বললেন, ‘উৎসবে এসে সম্মোহিত হয়ে গেছি। বাংলাদেশের এই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কথা জানতাম না। দেখে খুবই ভালো লাগছে। এককথায় অপূর্ব।’

যুক্তরাজ্যের পাঁচ পর্যটক দলের সঙ্গে বান্দরবানে বেড়াতে এসেছিলেন ইংরেজ তরুণী ইরিনা। ত্রিপুরাদের ‘মাইক্তা চাম পান্দা’ উৎসবের কথা শুনে ছুটে এসেছেন তাঁরা। ‘মাইক্তা চাম পান্দা’ ত্রিপুরাদের নবান্ন উৎসব। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের (কেএসআই) পৃষ্ঠপোষকতায় এবার নানা আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো এ উৎসব।

‘মাটির গন্ধে জীবনের ছন্দে আমার জুমে প্রাণের স্পন্দনে’ শিরোনামের আয়োজিত এ উৎসবে জেলায় বসবাসরত উসুই ত্রিপুরাদের জীবন ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে। সকাল ৯টায় শুরু হওয়া উৎসবে পাড়ার ৫৪টি পরিবারের কয়েক শ সদস্য ত্রিপুরাদের পোশাক রিনাই, রিসা, লুখো (পুতির মালা), চন্দ্রাওয়া (রুপার মালা) ও হরেক রকম অলংকার পরে নেচে–গেয়ে অতিথিদের বরণ করে নেন। এরপর সবার সামনে তুলে ধরেন জুমের সরঞ্জাম, বাদ্যযন্ত্র ও ফসল। এরপর চলে দলীয় নাচ ও গান।

নবান্ন উৎসবে ত্রিপুরা নাচ ও গান পরিবেশন করেন তরুণ–তরুণীরা। আজ সকালে বান্দরবানের হাতিভাঙ্গা পাড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন। আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য সিংয়ং ম্রো, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফজলুর রহমান, কেএসআই পরিচালক মং নু চিং মারমা। সভাপতিত্ব করেন হাতিভাঙ্গা পাড়ার কার্বারি (পাড়াপ্রধান) বাদুহা ত্রিপুরা।

ত্রিপুরা শিল্পীরা লোকসমাজের ঐতিহ্য ও বর্তমান সময়ের জীবনধারার গান ও নাচ পরিবেশন করেছেন। দশম শ্রেণির ছাত্রী চেলসি ত্রিপুরার নান্দনিক উপস্থাপনায় ঐতিহ্যবাহী বোতল নৃত্য উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করেছে।

দিনব্যাপী উৎসবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে মাইক্তা চাম বা নবান্ন পরিবেশন করা হয়। নবান্নের মধ্যে ছিল নতুন বছরের নতুন চালের পিঠা, বিন্নি চালের ভাত, পানীয় ও ঐতিহ্যবাহী ত্রিপুরা খাবার।

নবান্ন উৎসবে ঐতিহ্যবাহী গয়না ও পোশাকে সেজেছেন ত্রিপুরা নারীরা। আজ সকালে বান্দরবানের হাতিভাঙ্গা পাড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

পাড়ার কার্বারি বাদুহা ত্রিপুরা বলেছেন, ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বান্দরবানের ত্রিপুররা উসুই গোত্রের। তাঁদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির ত্রিপুরাদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। উসুই ত্রিপুরা নারীরা গলায় পুঁতির মালা পরেন বেশি।

জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেছেন, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীসহ পাহাড়ের ১১টি জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে। এই সংস্কৃতি বিকাশ ও বিবর্তনে সরকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট গঠন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরছে সবার সামনে।