বসয় মাত্র ছয় মাস। মায়ের মৃত্যুশোক তাকে স্পর্শ করার কথা নয়। তাই কখনো নিজের মতো কাঁদছে আবার কখনো নিজের মতো করে হাসছে শিশু রৌজামণি। তবে রাতে মাকে পাশে না পেয়ে অনেক কেঁদেছে সে।
গতকাল বুধবার সকালে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার চেলেরঘাট এলাকায় বাসচাপায় মারা গেছেন রৌজামণির মা জেসমিন আক্তার (২৫)। এ দুর্ঘটনায় মোট ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকেই।
নিহত জেসমিন আক্তারের বাড়ি ত্রিশাল উপজেলার হদ্দের ভিটা গ্রামে। তাঁর স্বামীর নাম হাসান মিয়া। জেসমিন আর হাসানের বিয়ে হয় দেড় বছর আগে। তাঁদের একমাত্র সন্তান ছয় মাস বয়সী মেয়ে রৌজামণি। জেসমিন বাড়ি থেকে গিয়ে চাকরি করতেন ভালুকা উপজেলার হাবিরবাড়ি এলাকার একটি পোশাক কারখানায়। গতকাল কাজে যাওয়ার সময় তিনি দুর্ঘটনায় নিহত হন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, জেসমিনের বাড়িতে শোকের ছায়া। জেসমিনের স্বামী হাসান মিয়া রৌজামণিকে কোলে নিয়ে বাড়ির সামনে বাসে আছেন। হাসানের মুখ বিষণ্ন। জানতে চাইলে হাসান মিয়া বলেন, ছয় মাস বয়সের বাচ্চাটা গতকাল রাতে প্রথম মাকে ছাড়া থেকেছে। দিনে মা কাজে থাকত। কিন্তু রাতে প্রতিদিন মায়ের পাশে শুয়ে ঘুমাত মেয়েটা। গতকাল মা ছিল না। একটু পরপর কেঁদে উঠছে মেয়েটা।
হাসান মিয়া জানান, বিয়ের আগেও জেসমিন পোশাক কারখানায় কাজ করেছেন। তবে বিয়ে পর হাসান জেসমিনকে কাজ করতে দিতেন না। হাসান একটা অটোরিকশা কিনেছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস আগে বাবা মারা যাওয়ার পর হাসানের বেশ কিছু টাকা ঋণ হয়। তখন বাধ্য হয়ে অটোরিকশা বিক্রি করে দিনমজুরের কাজ নেন। তবে প্রতিদিন কাজ পাওয়া যায় না। এমন অবস্থায় জেসমিন আবারও পোশাক কারখানায় কাজ নেন।
রৌজামণির দাদী হালিমা আক্তার বলেন, রাতে অনেক কেঁদেছে। তবে সকাল থেকে আবার কিছুটা স্বাভাবিক। সপ্তাহের শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৭টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন জেসমিন আক্তার। ফিরতেন সন্ধ্যার পর। ওভারটাইম থাকলে রাত ১০টাও বেজে যেত। তবে শুক্রবার সারাদিন মেয়েকে সময় দিতেন।
হাসানের চাচা লাল মিয়া বলেন, জেসমিন সংসারের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ছয় মাসের বাচ্চাটাকে রেখে তিনি চলে গেলেন। অভাবের সংসারে বাচ্চাটার ভবিষ্যৎ কী, সেটাই এখন ভাবনার বিষয়।
জেসমিনের স্বজনেরা জানান, ভালুকার যে কারখানায় তিনি কাজ করেন, সেখানে জেসমিনের বোন ও দুলাভাইও কাজ করেন। প্রতিদিন সকাল আটটায় কাজে যেতে হয়। গতকাল সকাল নয়টা বেজে গেলেও জেসমিন না যাওয়ায় বোন হাসানকে ফোন করেন। এর মধ্যে হাসান খবর পান চেলেরঘাটে সড়ক দুর্ঘটনার। হাসান কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে দুর্ঘটনাস্থলে যান। সেখানে কাউকে না পেয়ে যান ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানেও না পেয়ে যান ত্রিশাল থানায়। ত্রিশাল থানার যাওয়ার পর জেসমিনের মৃত্যুর সংবাদ পান।