কুমিরা নৌঘাটে ভোর থেকে টিকিটের জন্য লাইন, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় হাজারো যাত্রী

টিকিটের জন্য ভোর থেকে অপেক্ষা করছেন ঈদে ঘরমুখী মানুষ। বুধবার সকালে সীতাকুণ্ডের কুমিরা নৌঘাটেছবি: প্রথম আলো

খালপাড় থেকে শুরু করে দোকানপাট, জেটি, সড়ক, কাউন্টার—কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। টিকিটের জন্য ভোর চারটা থেকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা। কেউ কেউ বিকল্প পথে টিকিট নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা নৌঘাটের চিত্র এটি।

সন্দ্বীপের সিংহভাগ মানুষ এ ঘাট দিয়ে পারাপার হন। ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঘরে ফেরা মানুষ ভোর চারটা থেকে ঘাটে অবস্থান করছেন। একদিকে যাত্রীদের চাপ, অন্যদিকে খারাপ আবহাওয়ার কারণে নৌযান কম। ফলে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, অন্যান্য বছর ঈদের আগে এমনকি পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগেও সীতাকুণ্ডের কুমিরা থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া নৌপথে যাত্রীবাহী জাহাজের অন্তত দুটি ট্রিপ দেওয়া হয়। কিন্তু এবার নানা অজুহাতে বিআইডব্লিউটিসি (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন) মাত্র একটি ট্রিপে যাত্রী পারাপার করছে। এ ছাড়া জাহাজ থেকে উপকূলে যাত্রী আনা-নেওয়ায় অন্যান্যবারের তুলনায় কম লাল বোট দিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। এতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। দেড় ঘণ্টার পথ সাত থেকে আট ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে।

অবশ্য ঘাট কর্তৃপক্ষের দাবি, খারাপ আবহাওয়ার কারণে তাঁরা জাহাজের বিকল্প নৌযান চালাতে পারছে না। এতে ঘাটে যাত্রীজট তৈরি হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে স্পিডবোট বা কাঠের ট্রলারযোগে যাত্রী পারাপার করলে যাত্রীদের এত চাপ থাকত না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘাটের দুটি জেটি যাত্রীতে পূর্ণ। ঘাটের কার্যালয়ের সামনে পা ফেলার জায়গা নেই। সড়ক থেকে টিকিট কাউন্টার পর্যন্ত দীর্ঘ সারি। টিকিট কাউন্টারের একেবারে সামনে থাকা লোকজন জানালার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে টিকিট নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

টিকিটের লাইনে দাঁড়ানো এক যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ঘাটে এসে টিকিট না পেয়ে সন্ধ্যায় ফিরে যেতে হয়। এ জন্য আজ ভোর পাঁচটার সময় লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তখনো এসে দেখেন দীর্ঘ সারি। কয়েকটি কাঠের ট্রলার যাত্রী পারাপার করায় অবশেষে লাইনের সামনে এসেছেন তিনি। সকাল সাড়ে নয়টায় সময়ও তিনি টিকিট পাননি।

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করতে কষ্ট ভোগ করেও টিকিট নেওয়ার চেষ্টা যাত্রীদের। বুধবার সকালে সীতাকুণ্ডের কুমিরা নৌঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

ভোর থেকে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছেন হরিশপুরের যাত্রী মাওলানা মো. আমির হোসেন। তিনি কন্যাশিশুকে কোলে নিয়ে এদিক-ওদিক পায়চারি করছিলেন। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সন্দ্বীপের উদ্দেশে রওনা দেন গতকাল। ভোর চারটার দিকে তাঁরা ঘাটে এসে পৌঁছান। কাঠের ট্রলারের টিকিট পেয়েছিলেন। কিন্তু ঝুঁকির কথা ভেবে কাঠের ট্রলারে ওঠেননি। এখন মনে করছেন ভুল করেছেন। যাত্রীদের চাপের মধ্যে জাহাজের টিকিট পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

সন্দ্বীপের মগধরা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল আজিজ অভিযোগ করে বলেন, যাত্রীবাহী জাহাজে ভাড়া ১২০ টাকা হলেও ঘাট কর্তৃপক্ষ ১৬০ টাকা নিচ্ছে। ঘাটের লোকজনের সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না। কিছু জিজ্ঞাসা করলেই তাঁরা যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন।

জানতে চাইলে ঘাটের ইজারাদার প্রতিনিধি নূর উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে আকাশের পরিস্থিতি ভালো ছিল। আবহাওয়া ভালো থাকায় কয়েকটি কাঠের ট্রলারে কিছু যাত্রী পারাপার করতে পেরেছেন। আটটার পর থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেল উত্তাল হয়ে পড়ে। বাতাস বেড়ে যায়। এরপর তাঁরা কাঠের ট্রলার ও স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার বন্ধ করে দেন। এতে যাত্রীদের জট তৈরি হয়। জাহাজ নয়টার দিকে এসে ফিরেছে। একটি ট্রিপ দেবে যাত্রীবাহী জাহাজ। ফলে, যে যাত্রী এখন ঘাটে আছে, বেশির ভাগই যেতে পারবেন না। যদি আকাশের পরিস্থিতি ভালো হয়, তাহলে কাঠের ট্রলার ও স্পিডবোটে অল্প সময়ে সব যাত্রী পার করে দেওয়া সম্ভব বলে তিনি জানান।

বিআইডব্লিউটিসি চট্টগ্রামের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) গোপাল চন্দ্র মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঘাটের পরিস্থিতি দেখতে কুমিরা ঘাটে এসেছেন। এখন পর্যন্ত সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে জাহাজ একটি ট্রিপ চলবে। যদি আবহাওয়া পরিস্থিতি উন্নতি হয় এবং যাত্রীদের চাপ থাকে তাহলে ট্রিপ বাড়ানো যায় কি না, তা পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।