আসামি সৌদি আরবে, তাঁর হয়ে কারাগারে অন্যজন

কারাগার
প্রতীকী ছবি

তৈরি পোশাক বিক্রেতা আল আমিন তালুকদার দুই দিন ধরে আছেন বাগেরহাট জেলা কারাগারে। অথচ তিনি কোনো মামলার আসামিই নন। মারধরের এক মামলায় সৌদিপ্রবাসীর হয়ে আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে কারাবন্দী হয়েছেন আল আমিন। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেছে কারা কর্তৃপক্ষও।

কারাগার ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার আবদুস সালাম নামের এক ব্যক্তি ২০২২ সালের ২১ মার্চ প্রবাসী ফরিদ উদ্দিন মানিক হাওলাদারসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে অজ্ঞাত আসামি করে মারধরের অভিযোগে মামলা করেন। জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জেরে হামলার অভিযোগে করা ওই মামলার প্রধান আসামি করা হয় শরণখোলা উপজেলার পশ্চিম খাদা গ্রামের ফরিদ উদ্দিন মানিক হাওলাদারকে। গত বছরের ৩১ মে চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলে ফরিদ উদ্দিন মানিক ছাড়া অন্য আসামিরা আদালত থেকে জামিন নেন। তবে প্রবাসী ফরিদ উদ্দিন আবারও সৌদি চলে যাওয়ায় জামিন নিতে পারেননি। এ অবস্থায় শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা বাজার এলাকার তৈরি পোশাক বিক্রেতা আল আমিন তালুকদার নিজেকে প্রবাসী ফরিদ উদ্দিন মানিক দাবি করে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন। মঙ্গলবার বাগেরহাটের (ভারপ্রাপ্ত) চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আতিকুস সামাদ জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ফলে প্রবাসী ফরিদ উদ্দিন মানিক হয়ে দুই দিন ধরে কারা ভোগ করছেন আল আমিন তালুকদার।

ফরিদ উদ্দিন মানিক বর্তমানে সৌদি আরব থাকার বিষয়টি প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁর এক কাছের স্বজন। এ বিষয়ে মামলার বাদী আবদুস সালাম বলেন, ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমি মামলা করেছি। তবে প্রবাসীর পরিবর্তে অন্য ব্যক্তি আদালতে হাজির হয়ে কারাগারে যাওয়ার বিষয়টি আমাকে হতাশ করেছে। আমি আশা করি, আদালত এ ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী অনিমা দেবনাথ বলেন, এক আসামির জায়গায় অন্যজনের আদালতে হাজির হওয়া ও জামিন নেওয়ার চেষ্টা অনেক বড় অন্যায়। বাদীর মাধ্যমে তাঁরা বিষয়টি জানতে পেরেছেন। ঈদের ছুটির কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কার্যক্রম স্বাভাবিক হলে তাঁরা বিষয়টি আদালতকে জানাবেন।

ফরিদ উদ্দিনের পরিবর্তে আল আমিনের কারাগারে আসার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পেয়েছে কারাগার কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা কারাগারের সুপার এ এস এম কামরুল হুদা বলেন, বিষয়টি আদালতকে জানানো হবে।

বাগেরহাট জেলা পুলিশের গণমাধ্যম শাখার সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক এস এম আশরাফুল আলম বলেন, ‘আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’