অবসরের পরও আছেন শিক্ষার্থীদের পাশে

শফিয়ার রহমান শুধু শিক্ষক হিসেবে পরিচিত নন, সামাজিক আন্দোলনের অগ্রসৈনিক হিসেবেও তাঁর সুনাম রয়েছে।

শফিয়ার রহমান

রংপুর জিলা স্কুল থেকে সদ্য অবসরে গেছেন শিক্ষক শফিয়ার রহমান (৬১)। চাকরি থেকে অবসর নিলেও কাজ থেকে অবসর নেননি। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নানামুখী কাজ করছেন তিনি। আর্থিক সংকটে শিক্ষার্থীরা যেন ঝরে না পড়ে, এমন শিক্ষার্থীদের বাড়িতে এনে পড়াশোনা করান তিনি। এর পাশাপাশি অসহায় পরিবারের শিক্ষার্থীদের আপদ-বিপদেও পাশে দাঁড়ান। নানামুখী কর্মকাণ্ডের জন্য ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২১’ পেয়েছেন তিনি।

শিক্ষক শফিয়ার জানালেন, তাঁর স্কুলজীবন কেটেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়ার পারুলিয়া তফসিলি দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে। এরপর রংপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন রংপুরের সরকারি কারমাইকেল কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগে। স্নাতক পাস করে স্নাতকোত্তর করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

এরপর রংপুর আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি নেন। একই সঙ্গে রংপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে এমএড ডিগ্রি লাভ করেন। চাকরিজীবনের শুরুতে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে চাকরি শুরু করেন। রংপুর জিলা স্কুলে প্রায় ১৮ বছর শিক্ষকতা করেন।

শফিয়ার রহমান বর্তমানে রংপুর শহরের কেরানীপাড়ায় বসবাস করেন। তাঁর এক ছেলে চাকরি করছেন। মেয়ে স্নাতকোত্তরে পড়ছেন। স্ত্রী সেতারা আক্তার পারভীন গৃহিণী।

জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শাহ মোহাম্মদ আসিফ বলেন, ‘জিলা স্কুলে থাকা অবস্থায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আয়োজন, বৃত্তি প্রদান, ক্রিকেট, ফুটবল উৎসবসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে শফিয়ার স্যারের চেষ্টা ছিল মনে রাখার মতো। এ ছাড়া পয়লা বৈশাখে স্যার নিজেই লাঠিখেলা দেখাতেন। তিনি ছিলেন আমাদের প্রিয় স্যার।’

রংপুর জিলা স্কুল সূত্র জানায়, স্কুলের বিশাল এলাকাজুড়ে ছিল ঝোপঝাড়। সেগুলো পরিষ্কার করে শফিয়ার রহমান নানা জাতের গাছের চারা রোপণ করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে খরা মৌসুমে তিনি পানি দেওয়াসহ গাছের পরিচর্যা করতেন। এতে অভিভাবকদের কটু কথাও শুনতে হয়েছে। এরপরও তিনি থেমে যাননি। এর ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক আরও মজবুত হয়ে ওঠে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, শফিয়ার রহমান শুধু শিক্ষক হিসেবে পরিচিত নন, সামাজিক আন্দোলনের অগ্রসৈনিক হিসেবেও তাঁর সুনাম রয়েছে। বর্তমানে তিনি ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

শফিয়ার রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ছোটবেলায় তিস্তা নদীর পাড় থেকে নদীভাঙন ও বন্যাকবলিত মানুষের দুঃখ খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। পরে ভাবলেন, স্কুলে অদম্য অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে হবে।

শফিয়ার আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য সারা জীবন কাজ করে যেতে চান। কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়া মানে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়া নয়। তাই সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে চান।