ময়মনসিংহে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ, সড়কে বিক্ষোভ

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আজ বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহে নগরের টাউন হল মোড় এলাকায় ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালন করেনছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’(আমাদের নায়কদের স্মরণ) কর্মসূচি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার নগরের টাউন হল এলাকায় শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের প্রবেশমুখে টাউনহল এলাকার সড়কে বিক্ষোভও করেন তাঁরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নগরের টাউন হল চত্বরে আজ বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় বুধবার রাতে। সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণপ্রেপ্তার, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও শিক্ষকদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদ, জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্ত করে বিচার ও ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

আজ কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বেলা সোয়া ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গকূল সূত্রধর মানিক, আনোয়ার হোসেন ও আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী সমাবেশস্থলে আসেন। পুলিশ তাঁদের সরে যেতে বলে। তখন পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রধান সমন্বয়ক আশিকুর রহমান মিছিল নিয়ে আসেন। আনন্দ মোহন কলেজে যাওয়ার সড়কের মুখে মিছিল আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। তবে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা টাউন হল চত্বরে আসেন। পরে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আরও শিক্ষার্থী এসে সেখানে জড়ো হন।

বেলা একটার দিকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। কর্মসূচি চলাকালে সড়কে এঁকে দেওয়া হয় প্রতিবাদী স্লোগান। শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল ফেস্টুন। কবিতায়, গানে, কথায় প্রতিবাদ চলতে থাকে। হত্যার বিচার, নির্যাতনের বর্ণনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন বক্তারা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকেরা এতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।

কর্মসূচির শুরুতে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
ছবি: প্রথম আলো

পুরো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের প্রবেশমুখ টাউন হল এলাকার সড়ক অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন তাঁরা। প্রায় দুই ঘণ্টা ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গকূল সূত্রধর মানিক বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আজ একা নন। অভিভাবক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, আইনজীবী সবাই আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তাই শিক্ষার্থীদের কোনো ভয় নেই। আমরা নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছি।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিতে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন
ছবি: প্রথম আলো

আন্দোলনে অংশ নেওয়া ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাইয়ান শাহারিয়ার বলেন, ‘যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করতে আজ আমরা এখানে জমায়েত হয়েছি। আমাদের শিক্ষকদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রাজপথে এসেছি এসবের প্রতিবাদ করতে।’

কর্মসূচিতে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিয়া খন্দকার। তিনি বলেন, ‘শুরুতে পুলিশ নিষেধ করেছিল, কর্মসূচি করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু আমাদের ভাইয়েরা অন্য কোথাও জমায়েত হয়ে একসঙ্গে মিছিল নিয়ে আসে। পুলিশ আটকাতে পারেনি। হত্যাকাণ্ডের বিচার ও আমাদের দাবি আদায়ের জন্য কর্মসূচি করেছি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহের সহ–‍সমন্বয়ক তানজিল হোসেন বলেন, ‘আমাদের ছাত্রসমাজের আন্দোলন কোটা সংস্কার দিয়ে শুরু হয়েছিল। কোটা সংস্কার হলেও অনেক রক্ত ঝরেছে। আমরা ছাত্রসমাজ এটি মেনে নিতে পারি না। আমাদের ৯ দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’