পায়ুপথ দিয়ে ঢুকে পড়া কুঁচে জীবিত থাকা নিয়ে যা বলছেন চিকিৎসকেরা

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জেলের পেট থেকে বের করা কুঁচেছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের হাইল হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে জেলের পায়ুপথ দিয়ে ঢুকে যাওয়া কুঁচেটি পেটের ভেতরে বেঁচে ছিল প্রায় ৩৬ ঘণ্টা। এরপর অস্ত্রোপচার করে এটি বের করা হয়। কিছুক্ষণ দেরি হলে রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় চলে যেতে পারতেন। পেটের ভেতরে কোনোভাবে অক্সিজেন পাওয়ায় এটি জীবিত ছিল।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী জানে আলম আজ বুধবার দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান।

আরও পড়ুন

গত রোববার রাতে তাঁর নেতৃত্বে সম্রা মুন্ডা (৫৫) নামের এক জেলের পেট থেকে অস্ত্রোপচার করে জীবন্ত কুঁচে বের করা হয়। সম্রা মুন্ডা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের মিরতিঙ্গা চা–বাগানের বাসিন্দা।

হাইল হাওরে কুঁচে শিকার করতে গিয়ে গত শনিবার বিকেলে একটি গর্ত থেকে দুটি কুঁচে ধরেন সম্রা মুন্ডা। কুঁচে দুটি থলেতে ভরতে গিয়ে কাদায় পা পিছলে পড়ে যান। তখন কুঁচে দুটি হাত থেকে ছুটে যায়। এ সময় একটি তাঁর পরনের প্যান্টের মধ্যে ঢুকে পড়ে। একপর্যায়ে পায়ুপথ দিয়ে কিছু একটা ঢুকে পড়ার অনুভূতি পান তিনি। পরদিন সকালে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হলে ছেলেকে নিয়ে প্রথমে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে যান। সেখান থেকে তাঁকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সহযোগী অধ্যাপক কাজী জানে আলম প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্রোপচারের আগে নিশ্চিত হতে শুধু রোগীর পেটের এক্স-রেটি তাঁদের হাতে ছিল। জরুরি হওয়ায় বেশি কিছু পরীক্ষা করা যায়নি। অনেক সময় কোনো কোনো রোগীর অবস্থা এত সংকটাপন্ন থাকে যে পরীক্ষা ছাড়াই অস্ত্রোপচার করতে হয়। সম্রা মুন্ডার অস্ত্রোপচার এত জরুরি ছিল, সিটি স্ক্যান করার সময়ও পাওয়া যায়নি। কিছুক্ষণ দেরি করলে সেপ্টিসেমিয়া (রক্তে জীবাণুর সংক্রমণ) হয়ে যেত। সরাসরি অস্ত্রোপচারই ভালো সিদ্ধান্ত ছিল।

পেটের ভেতরে মাছজাতীয় কুঁচের বেঁচে থাকা নিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, বৃহদন্ত্রের একটি অংশ ‘সিগময়েড কোলন’-এর প্রায় তিন থেকে চার সেন্টিমিটার ছিদ্র করে পেটের ‘পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটির’ মধ্যে ঢুকে পড়েছিল কুঁচেটি। সেখানে কিছুটা অক্সিজেন পাওয়ায় এটি বেঁচে ছিল। তিনি বলেন, এমন ঘটনা মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়। তবে জীবন্ত পাওয়া এবারই প্রথম। রোগীর পেটের বাঁ পাশ দিয়ে মল বের হওয়ার রাস্তা বের করতে হয়েছে। দেড় মাস পর সেটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আরেকটি অস্ত্রোপচার করা হবে। রোগীকে আরও ১০ দিন হাসপাতালে রেখে সেলাই শুকিয়ে যাওয়ার পর ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে আগে মানুষের পায়ুপথ দিয়ে ঢোকা জোঁক, পানির গ্লাস, বোতল, খেলনা, ‘সিগময়েড কোলন’ ছিদ্র করে পেটে ঢুকে পড়া কৃমি অপসারণের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তবে এই প্রথম জীবন্ত কোনো মাছ মানুষের পেট থেকে বের করা হয়েছে।

হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, সম্রা মুন্ডার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এখন অক্সিজেনের সহায়তা লাগছে না। তাঁকে পানিজাতীয় খাবার মুখে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পেটে সংক্রমণ রোধে মেরোপেনম ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রেখে পেটের সেলাই কাটার পর তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।