আমার বিজয় ছিনতাই হয়েছে, আদালতে রিট করব: হিরো আলম

উপনির্বাচনে ফল ঘোষণার পর সংবাদ সম্মেলন করেন হিরো আলম। বুধবার রাত সাড়ে দশটায় বগুড়া শহরতলীর এরুলিয়ায়।
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে ফল পাল্টানোর অভিযোগ তুলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম বলেছেন, ১০টি কেন্দ্রের ফল ছিনতাই করা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় বগুড়া শহরতলির এরুলিয়ায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

হিরো আলম বলেন, ‘সারা বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিল, হিরো আলমের আজ কী হবে? গর্বে আমার বুকটা ভরে গেছে, এই নির্বাচন নিয়ে গোটা বিশ্বের মানুষের আগ্রহ দেখে মনে হয়েছে, আমি প্রধানমন্ত্রীর ভোট করলাম। মানুষ তাকিয়ে ছিল আমার বিজয় হবে। কিন্তু সেই বিজয় ছিনতাই হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিজয় ছিনতাই হয়েছে। এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি। এই ফলাফল বয়কট করছি। এই ফল মানি না। ফলাফল বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করব।’

বুধবার এ আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। এতে মহাজোটের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন হিরো আলম। একতারা প্রতীকে হিরো আলম পেয়েছেন ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট। নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ২৩ দশমিক ৯২।

সংবাদ সম্মেলনে হিরো আলম অভিযোগ করেন, ভোট গ্রহণের পর নন্দীগ্রাম উপজেলা প্রশাসনে স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে যখন ফলাফল ঘোষণা চলছিল, তখন ৪৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ থেকে ৩৯টি কেন্দ্রের ফলাফল কেন্দ্রভিত্তিক ঘোষণা করা হয়। এরপর ফলাফল ঘোষণায় বিরতি দেওয়া হয়। কিছু সময় পর ১০ কেন্দ্রের ফল কেন্দ্রভিত্তিক ঘোষণা না করেই জাসদের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনকে হঠাৎ করে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

ফলাফল ঘোষণার আগেও অনিয়মের অভিযোগ করেন হিরো আলম। তিনি বলেন, ‘দুই উপজেলার ১১২টি কেন্দ্রেই এজেন্ট দিয়েছিলাম। কিন্তু কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের ফলাফলের স্বাক্ষরিত কপি দেওয়া হয়নি।’  

রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেছিলেন কি না,  গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, ‘ভোটের অনিয়ম বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। ফলাফল বাতিল চেয়ে এখন উচ্চ আদালতে যাব।’

হিরো আলম আরও বলেন, ‘বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। তবে ফলাফলে এসে গন্ডগোল করেছে। নির্বাচন কমিশন আমার বিজয় ছিনতাই করে মশালের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে।’

ফল পাল্টানোর কারণ কী, এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, ‘শিক্ষিত সমাজের কিছু লোক আছেন, যাঁরা আমাকে মেনে নিতে চান না। তাঁরা মনে করেন, “আমি পাস করলে বাংলাদেশের সম্মান যাবে, তাঁদের সম্মান যাবে। আমরা এত শিক্ষিত, হিরো আলমের মতো মূর্খকে স্যার বলে ডাকতে হবে।” এ জন্য তাঁরা আমাকে মানতে চান না। তাঁরা আমার বিজয় মেনে নিতে পারেননি। নির্বাচন নিয়ে এ রকম প্রহসন হলে, কারচুপি হলে মানুষ নির্বাচন ভুলে যাবে।’

নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে হিরো আলম বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, এ কারণে শহরে সংবাদ সম্মেলন না করে বাসায় করছি। বগুড়া-৬ আসনে আমার এজেন্ট দিতে দেওয়া হয়নি। আমার কর্মীদের মারধর করা হয়েছে।’

ভোটারদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হিরো আলম বলেন, ‘৮-১০ কর্মী আর একটা পিকআপ আর মাইক নিয়ে নির্বাচন করেছি। নিজের জীবন ধ্বংস করে ভোট করেছি। ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমি আপনাদের পাশে ছিলাম, আগামীতেও থাকব।’

এর আগে বুধবার দুপুরে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হিরো আলম বলেন, ‘সদরের (বগুড়া-৬) কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাচে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ।’ তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু হচ্ছে জানিয়ে হিরো আলম বলেছিলেন, ‘কাহালু-নন্দীগ্রামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকচি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা খুবই ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামের নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’

আরও পড়ুন