ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে জরাজীর্ণ ভবনে এইচএসসি পরীক্ষা

কালীগঞ্জের সরকারি মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের পুরোনো ভবনে এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র করা হয়েছে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সরকারি মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের এই জরাজীর্ণ ভবনে এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র করা হয়েছে
প্রথম আলো

ভবনের দেয়াল ও ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। পলেস্তারা খসে পড়ে কয়েকটি স্থানে রড বের হয়ে আছে। জরাজীর্ণ ভবনটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের সরকারি মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের। এই ভবনে ১ হাজার ৩২৯ জন শিক্ষার্থী আজ বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন।

কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকারি মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজটি ৫৫ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। ভবনটি এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভবনের চারপাশে পুরো বর্ষা মৌসুমেই পানি জমে থাকে। বারান্দার নিচে পা ফেলার উপায় নেই। মাথার ওপর থাকা ছাদের রডগুলো দেখা যায়।

কলেজের শিক্ষকেরা বলছেন, এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কক্ষগুলোতে পরীক্ষার দায়িত্ব পালনে তাঁরাও ভয় পাচ্ছেন। সেখানে বাইরের আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেবেন। কর্তৃপক্ষের এই ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। আর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোজ কান্তি বিশ্বাস বললেন, ঝুঁকি তাঁরাও জানেন। কিন্তু বিকল্প না থাকায় এই ভবনে দুটি বিষয়ের পরীক্ষা নিতে হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, ১৯৬৬ সালে কালীগঞ্জে কিছু শিক্ষানুরাগী শহরের নিমতলা এলাকায় মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কলেজে ২ হাজার ৮৩৫ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন। প্রতিষ্ঠাতা আফসার উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মাহবুবার রহমান জানান, কলেজ প্রতিষ্ঠার পর শহরের মেইন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মরহুম রফি উদ্দিন মিয়ার একটি ভবনে ক্লাস শুরু হয়। এরপর নিজস্ব জমিতে ভবন নির্মাণ শুরু হয়। কলেজের পুরোনো যে ভবন ছিল—শুরুর সময়ের ভবন, সেটি ১৯৬৮ সালে নির্মাণ করা হয়।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজটিতে বর্তমানে পাঁচটি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে মূল ভবনে (পুরোনো ভবন) ১৫টি কক্ষ ব্যবহারের অনুপযোগী। মূল ভবনের চারদিকে পানি জমে আছে। কলেজের ভেতরের দুই পথ দিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে একটি পথে ইটের গুঁড়া ফেলা আছে। অন্যটি পানি-কাদা টপকে যেতে হচ্ছে। নতুন ভবনগুলোর সামনের মাঠের অবস্থাও খুবই খারাপ। দেখে মনে হচ্ছে, ধানখেতে আগাছা জন্মেছে।

কলেজের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে অনার্স ভবনের ৬টি ও ২টি একাডেমিক ভাবনের ১০টি কক্ষের মধ্যে ছয়টিতে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে, বাকিগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। হিসাব অনুযায়ী, অনার্স ভবন ও একাডেমিক ভবনে ২৭৫ থেকে ২৮০ জন, বাকিরা ঝুঁকির মধ্যে বসেই পরীক্ষা দেবেন। একাডেমিক ভবনের ৪টি কক্ষে অফিস ও ল্যাব রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জায়গা না থাকার অজুহাতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কলেজের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দীর্ঘদিনেও এই কলেজে নতুন কোনো ভবন নির্মাণ করা হয়নি। পুরোনো ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যে কারণে ৪ থেকে ৫ বছর হলো তাঁরা অনেকটা বাধ্য হয়ে কিছু ক্লাস ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে নিচ্ছেন। দুটি একাডেমিক ভবন আর স্থানীয়ভাবে তৈরি অনার্স ভবন দিয়ে চালানো হচ্ছে। অনার্স ভবনের ৬টি ও একাডেমিক ভবনের ৬টি কক্ষ ব্যবহারের উপযোগী। বাকি সব কটিই ঝুঁকিপূর্ণ।

কলেজের পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক রকিবুল ইসলাম জানান, এইচএসসি পরীক্ষায় সাধারণ পরীক্ষার্থী ৭৭৯ ও কারিগরি বিভাগে ৫৫০ জন আছেন। এই বিশাল শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিতে তাঁদের পুরোনো ভবন ব্যবহার করতে হচ্ছে। ভবনটির অবস্থা আসলেই খারাপ, কিন্তু তাঁদের কিছু করার নেই।

কেন্দ্র সচিব ও কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মনোজ কান্তি বিশ্বাস জানান, তাঁরা কলেজে নতুন ভবন নির্মাণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পুরোনো ভবনটির অবস্থা তিনি ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসককে দেখিয়েছেন। জেলা প্রশাসকও এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর জন্য বলেছেন। এই অবস্থায় আপাতত পরীক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পুরোনো ভবনে দুটিতে পরীক্ষা নিতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আহসান হাবিব জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এখন পর্যন্ত কেউ তাঁকে বলেননি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।