দেবীদ্বারে অনুমতি না নিয়ে যুবলীগ নেতার মেলার আয়োজন, স্টল ভেঙে দিল প্রশাসন

কুমিল্লা জেলার মানচিত্র

প্রশাসনের কোনো অনুমতি না নিয়েই কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার রেয়াজ উদ্দিন সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের এ বি এম গোলাম মোস্তফা স্টেডিয়ামে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করেছিলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাসেম। তবে মেলার উদ্বোধনের এক দিন আগেই আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে দেবীদ্বার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাসরিন সুলতানার নির্দেশে মেলার স্টল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সব ধরনের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কাল বুধবার ওই মেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল। আজ সকাল থেকে স্টেডিয়াম এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের দাবি, ২৮ মে উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা ও সমন্বয় কমিটির সভায় মেলার কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়েছে। চলমান এসএসসি পরীক্ষা, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কে যানজটের আশঙ্কা ও কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মেলার ওপর আগাম নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবুল কাসেম ওরফে ওমানী কাসেম এ মেলার আয়োজন করেন। কিন্তু মেলা আয়োজনের জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন থেকে কোনো অনুমতি নেননি। অনুমতি না নিয়ে তিনি স্টেডিয়ামে মেলার জন্য স্থাপনা নির্মাণ করেন। এতে দেবীদ্বারের ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ সকালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাসরিন সুলতানা ও দেবীদ্বার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল বাহার স্টেডিয়ামে যান। এ সময় স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি স্থাপনা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়।

তবে যুবলীগ নেতা আবুল কাসেমের দাবি, তিনি মেলা আয়োজনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেছেন। আবুল কাসেম বলেন, ‘মেলা না হওয়ার কারণে আমার অন্তত ২৭ থেকে ২৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা ইউএনওর কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে কোনো চিঠি পাইনি।’ অনুমতি না পেয়ে মেলার আয়োজন কীভাবে করলেন, এ প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

দেবীদ্বারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এর আগেও এ মাঠে বাণিজ্য মেলা, তাঁত মেলার আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর ঈদুল আজহার আগেই মেলা বসে। এসব মেলায় নিম্নমানের মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য এনে বিক্রি করা হয়। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ ছাড়া মেলার কারণে জনভোগান্তি বাড়ে এবং কোরবানির বাজার ব্যাহত হয়।

দেবীদ্বার রেয়াজ উদ্দিন সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সবুর আহমেদ বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাসেম স্কুল মাঠ ব্যবহারের আবেদন নিয়ে আসেন। কিন্তু কী কারণে ব্যবহার করবেন, তা জানাননি। মেলার অনুমোদন দেন জেলা প্রশাসক, আমি না।’

দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, ‘মেলার অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার জেলা প্রশাসক মহোদয়ের। ইউএনও মেলার অনুমতি দিতে পারেন না।’

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, ‘আমরা কোনো স্টেডিয়ামে মেলার অনুমতি দিই না। স্টেডিয়াম ক্ষতি করে বাণিজ্য মেলার স্টল দিতে পারি না। আমাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়ে স্টেডিয়ামে স্টলসহ নানা ধরনের স্থাপনা করা হয়। কুমিল্লা জেলায় কোথাও কোনো ধরনের মেলার অনুমতি আমরা দিচ্ছি না। তাই ওই মেলার স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছে। কিছু স্থাপনা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। স্টেডিয়ামে কোনো মেলা হবে না।’