মোংলায় বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে সংঘাত, ব্যালট বাক্স ছিনতাই
বাগেরহাটের মোংলা উপজেলায় বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দুপুরে মোংলা পৌর শহরের কবরস্থান রোডের দিগন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ যৌথ বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়।
পৌর বিএনপির তিনটি ওয়ার্ডের কমিটি গঠনের জন্য আজ ভোট গ্রহণ চলছিল। হামলাকারীরা একটি ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং অন্য ওয়ার্ডে নির্বাচন পরিচালনা করা ব্যক্তিদের ওপর হামলা করেন। যুবদলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও হামলার অভিযোগ ওঠে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ঘোষণা অনুযায়ী ওয়ার্ড পর্যায় থেকে বিএনপির কমিটি গঠন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মোংলা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার সব ওয়ার্ডের কমিটি গঠন কার্যক্রম শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে জেলা বিএনপির নেতারা আজ মোংলা পোর্ট পৌরসভার ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি গঠনের জন্য ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৬টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেতা নির্বাচিত হলেও তিনটিতে দাবি অনুযায়ী ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা হয়।
বিএনপির স্থানীয় নেতারা জানান, আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত পৌরসভার ১, ২ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করতে ওয়ার্ডের তালিকা অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন নেতারা। কিন্তু ভোট গ্রহণের শুরু থেকেই তা ব্যাহত করার পাঁয়তারা করছিলেন পৌর যুবদলের সদস্যসচিব এম এ কাশেমসহ কয়েকজন নেতা-কর্মী। দুপুরে হঠাৎ যুবদল নেতা কাশেমের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫টি মোটরসাইকেলে যুবদলের কয়েকজন সদস্য দিগন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও প্রশাসনের সামনে থেকে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যান যুবদল নেতা কাশেমসহ ২০ থেকে ২৫ জন নেতা-কর্মী।
এর আগে ওই ব্যক্তিরা ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামী আদর্শ একাডেমি বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা করে কয়েকজনকে মারধর করেন। এতে বিএনপির মোংলা পোর্ট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি প্রার্থী কামাল, তাঁর ছেলে আবদুল আহাদ, মো. ফিরোজ আহাম্মেদ ও বাহাদুর আহত হন। তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হামলার খবরে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছুটে এলে দুই পক্ষের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ, নৌবাহিনীসহ প্রশাসন ও জেলা বিএনপির নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মোংলা পৌর যুবদলের সদস্যসচিব এম এ কাশেমের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পৌর যুবদলের সভাপতি মাহমুদ রিয়াদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা দলে ছিলেন না এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে কাজ করেছেন, তাঁদের নিয়ে কমিটি করা হচ্ছিল। তাই যুবদলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা ভোট বন্ধ করার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা না শুনে নির্বাচন চালিয়ে গেছেন।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সৈয়দ নাছির আহাম্মেদ বলেন, কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই যুবদলের কিছু নেতা-কর্মী তাঁদের পছন্দের লোকদের দিয়ে কমিটি করতে ঝামেলা করছিলেন। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছিল। বেলা দেড়টার দিকে যুবদল নেতা কাশেমের নেতৃত্বে ১০-১২টি মোটরসাইকেলে বেশ কিছু লোক ভোটকেন্দ্রে আসেন। একপর্যায়ে তাঁরা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যান। আপাতত ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। পরে তফসিল ঘোষণা করে আবার নির্বাচন দেওয়া হবে।
সৈয়দ নাছির আহাম্মেদ আরও বলেন, ‘বিষয়টি আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি ও খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদককে জানিয়েছি। যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে লিখিতভাবে জানানো হবে। এম এ কাশেমসহ ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ে জড়িত সবার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ ও নৌবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।