অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

সরকারের অনুমোদন না থাকলে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারবে না। এটা বেআইনি।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাইনবোর্ড ঝুলছে এ ভাঙাচোরা ভবনের সামনে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঠদানের সরকারি অনুমোদন নেই। নেই শ্রেণিকক্ষ, চেয়ার-টেবিল বা বেঞ্চ। ভাঙাচোরা একটি বাড়ির সামনে সাইনবোর্ড ঝুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নামে। অথচ ২৩ জুলাই এক সংবাদপত্রে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যক্ষ থেকে আয়া পর্যন্ত মোট ৫৫ জন লোকবল নিয়োগ করা হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকারের অনুমোদন না থাকলে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারবে না। এটা বেআইনি।

গত বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কে অবস্থিত বাগদা বাজার। এখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি ভাঙাচোরা পাকা বাড়ির সামনে মাটিতে পড়ে আছে প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ড। বিলবোর্ডে লেখা ক্যাম্পাস ও প্রতিষ্ঠাকাল ২০১৮ সাল। সভাপতি ইমাম ইদ্রিস ও অধ্যক্ষ ছামিউল আলম। ওই বাড়ির মালিক ছামিউল আলম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাটাবাড়ি গ্রামের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ও অবকাঠামো কিছুই নেই। কৌশলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। বেতনকাঠামোও উল্লেখ করা হয়নি। আবেদনের জন্য জমা নেওয়া টাকা হাতিয়ে নিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২৩ জুলাই একটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, অধ্যক্ষ পদের জন্য দুই হাজার, প্রভাষক (২৪ জন) পদে দেড় হাজার টাকা করে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া প্রদর্শক (৬ জন), ল্যাব সহকারী (৪ জন) ও সহকারী শিক্ষক (১৪ জন) পদের জন্য এক হাজার করে এবং অফিস সহকারী (২ জন), নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নৈশপ্রহরী ও আয়া (৪ জন) পদের জন্য ৫০০ টাকা করে জমা দিতে হবে। এ টাকা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড গোবিন্দগঞ্জ শাখার একটি চলতি হিসাব নম্বরে জমা দিতে বলা হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বেতনের বিষয়টি উল্লেখ নেই। এ হিসাবে প্রতিটি পদে কমপক্ষে পাঁচজন করে আবেদন করলেও প্রতিষ্ঠানটি তিন লক্ষাধিক টাকা পাবে।

এ বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ছামিউল আলম বলেন, অনুমোদনের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীর তালিকা দরকার। তাই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এ ছাড়া আশপাশে সাত-আট কিলোমিটারের মধ্যে কোনো গার্লস স্কুল ও কলেজ নেই। এখানে এ রকম একটি প্রতিষ্ঠানের দরকার। তাই এটি করা হচ্ছে। আপাতত তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে আছেন। নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে নতুন অধ্যক্ষকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন।

প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ইমাম ইদ্রিস বলেন, চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি এক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নামে তিন বিঘা জমি দান করেছেন। আগামী বছরের জানুয়ারিতে ষষ্ঠ থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু হবে। এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেনটিফিকেশন নম্বরের জন্য গত ২৩ মে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম পারভেজ বলেন, অনুমোদন না থাকলে কেউ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারবে না। তিনি রোববার প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে খোঁজ নেবেন।