রাজশাহীতে এমওপি সার নিয়ে সংকট

এমওপি সার
ফাইল ছবি

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ২৮ জুলাই রাজশাহীতে এসে বলেছিলেন, ‘আগামী বোরো মৌসুম পর্যন্ত দেশে সারের কোনো সমস্যা হবে না। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। রাজশাহীতে কৃষক সার পাচ্ছেন না। কোনো পরিবেশক বলছেন, তাঁরা জুলাই মাসের এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সারের বরাদ্দ এখনো পাননি। আগস্টের টাকাই জমা নিচ্ছে না।

রাজশাহীর চারঘাটের কলেজশিক্ষক ও কৃষক আবু তাহের অভিযোগ করেন, ২৭ জুলাই চারঘাটের দুজন ডিলারের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে তিনি এমওপি সার পাননি। এর আগেও তিনি দুই দিন এই সারের জন্য ঘুরে গেছেন। আমগাছের গোড়ায় এমওপি সার দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ছিল। বাধ্য হয়ে তিনি ডিএপি সার দিয়েছেন।

জুলাই মাসের এমওপি সার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি) আমদানি করেছে। আর আগস্টের বরাদ্দের সম্পূর্ণটাই বিএডিসি আমদানি করেছে। বিএডিসির রাজশাহী কর্তৃপক্ষ বলছে, যারা সার পরিবহনের দায়িত্বে রয়েছে, তাদের গাফিলতির কারণে এটা হচ্ছে।

বাঘা উপজেলার দিঘা বাজারের ডিলার মেসার্স আবদুল আজিজের নামে সার বরাদ্দ আসে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দোকানে ছিলেন লিটন সরকার। তিনি বলেন, তাঁদের কাছে এমওপি সার নেই। আগস্ট মাসের বরাদ্দের জন্য টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। এখনো মাল পাননি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী জেলার জন্য গত জুলাই মাসের এমওপি সার বরাদ্দ ছিল ৬৮৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বিসিআইসির ১৭০ মেট্রিক টন ও বিএডিসির ৫১৪ মেট্রিক টন। এই সার বরাদ্দ করা হয়েছে গত ২১ জুন। বরাদ্দপত্রে বলা হয়েছে, এই সার সব সার ডিলারের মধ্যে সমহারে উপবরাদ্দ করে উপবরাদ্দের কপি আবশ্যিকভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। ডিলারেরা যাতে সঠিক সময়ে সার উত্তোলন করতে পারেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে আগস্ট মাসের ৬৬৩ মেট্রিক টন এমওপি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে গত ৭ জুলাই। এই সারের পুরোটাই বিএডিসির। রাজশাহীতে এই বরাদ্দের সার ডিলাররা এখনো পাননি। কৃষকেরা সার নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। অথবা বাইরে থেকে তাঁদের বেশি দামে এই সার কিনতে হচ্ছে।

বিএডিসির রাজশাহীর যুগ্ম পরিচালক জুলফিকার আলী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা নন-ইউরিয়া সার আমদানি করেন। তিনটি প্রতিষ্ঠান এগুলো সরবরাহ করে। তারা অল্প অল্প করে দেয়। এই জন্য সংকট দেখা দিয়েছে।

বাঘা উপজেলা সদরের ডিলার গোলাম মোস্তফা বলেন, তাঁদের দুই ভাইয়ের নামে দুটি লাইসেন্স রয়েছে। তাঁদের কাছে এমওপি সার নেই। তাঁরা জুলাই মাসে দুই লাইসেন্স মিলে ২৫০ বস্তা এমওপি সার বরাদ্দ পেয়েছিলেন। এখন গুদামে মাল নেই। তাই আগস্টের বরাদ্দ দিচ্ছে না।

চারঘাটের লক্ষ্মীপুর গ্রামের আমচাষি রবিউল ইসলাম বৃহস্পতিবার দুপুরে এলাকার মেসার্স আকাশ এন্টারপ্রাইজে এমওপি সারের জন্য এসেছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর কমপক্ষে তিন বস্তা সারের প্রয়োজন। কিন্তু তাঁকে ডিলার কোনো সার দিতে পারছেন না। প্রতিষ্ঠানটির ডিলারের কর্মচারী হেলালুদ্দিন জানিয়েছেন, আগস্ট মাসের বরাদ্দের জন্য টাকাই জমা নিচ্ছেন না। জমা নিলেও ভাউচার দিচ্ছেন না। তাঁরা কী করবেন? আগের তিন বস্তা সার শুধু রয়েছে। যে কৃষকের এখন তিন বস্তা সার দরকার, তাঁকে বড়জোর পাঁচ কেজি দেবেন। হেলালুদ্দিন বলেন, গত মাসে তাঁদের অন্যান্য সারও চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া হয়নি। তাঁদের ৪২ বস্তা টিএসপি সার দেওয়া হয়েছিল। সেটা একজন কৃষকের চাহিদার সমান। ডিএপি দেওয়া হয়েছিল ৫০ বস্তা। স্থানীয় চাহিদা ১০০ বস্তা। তাঁদের কিছু করার নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষক পর্যায়ে এই সারের সরকারি দাম হচ্ছে ৭৫০ টাকা বস্তা (৫০ কেজি)। অথচ বাইরে এই সার ১ হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সারও বেশি দামে বিক্রির খবর পাওয়া গেছে।

চারঘাটের ডাকরা গ্রামের কৃষক আলী আজগর সরকার বলেন, তাঁর সুপারিগাছে দেওয়ার জন্য ডিএপি সার তিনি বৃহস্পতিবার সকালে ২০ টাকা কেজি হিসেবে কিনেছেন। সরকারিভাবে এই সার ১৬ টাকা কেজি দরে কৃষক পর্যায়ে বিক্রি হওয়ার কথা।

রাজশাহীর তানোরের প্রাইম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী প্রণব কুমার সাহা বলেন, তিনি এমওপি সারের জুলাই মাসের বরাদ্দই এখনো পাননি। আগস্ট মাসের টাকা জমা দিয়েছেন। গুদামে মাল নেই, তাই দিতে পারছেন না।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘ডিলারদের সব কথা ঠিক নয়। তাঁরা অবশ্যই সার উত্তোলন করেছেন। ক্রাইসিস বলে কোনো কথা নেই। আমি এখনো মাঠেই মনিটরিংয়ের কাজই করছি।’