গরুর খামার করে শূন্য থেকে কোটিপতি কর্ণফুলীর মোহাম্মদ হোসেন

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহায় গরুর খামার করে কোটিপতি হয়েছেন মোহাম্মদ হোসেন। সম্প্রতি তোলাপ্রথম আলো

স্বপ্ন ছিল বড় খামারি হবেন, তবে খামার করার সম্বল ছিল না। তাই এক প্রতিবেশী থেকে ১৯৯৩ সালে দুটি গরু বর্গা নিয়ে লালনপালন শুরু করেন মোহাম্মদ হোসেন (৫৬)। গরু দুটি পরে বিক্রি করে তাঁর লাভের অংশ হিসেবে পান ৪৫ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে একটি দুধেল গাভি কিনে নিজ ঘরেই শুরু হয় তাঁর স্বপ্নের খামারের যাত্রা। এখন তাঁর রয়েছে ১২ শতক জমির খামার এবং শতাধিক গাভি ও বাছুর। খামার ঘিরেই তাঁর সম্পদের পরিমাণ অন্তত তিন কোটি টাকা।

মোহাম্মদ হোসেনের বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায়। এলাকার শিকলবাহায় অবস্থিত তাঁর খামারটি। সম্প্রতি সরেজমিনে হোসেনের খামারে গিয়ে দেখা যায়, খামারটি শিকলবাহা সেতু সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে। খামারের ভেতরে মোহাম্মদ হোসেন, তাঁর দুই ছেলে এবং পাঁচজন শ্রমিক কাজ করছেন। শ্রমিকদের কেউ গাভির পরিচর্যা করছেন, কেউ ব্যস্ত ট্রাক থেকে গবাদিপশুর খাবারের বস্তা নামাতে। হোসেন ও তাঁর দুই ছেলে শ্রমিকদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

কাজের ফাঁকে মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তাঁর খামারে ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল ও জার্সি জাতের শতাধিক গাভি ও বাছুর রয়েছে। তিনি ও তাঁর দুই ছেলে মহি উদ্দিন ও কামরুল হাসান খামারের দেখাশোনা করেন। এসব গবাদিপশুর খাবারের জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জমিতে জার্মান ঘাসের চাষ করা হয়েছে।

মোহাম্মদ হোসেন জানান, একসময় গ্রামে পারিবারিক একটি ছোট মুদিদোকান করতেন তিনি। হঠাৎ খামার করার স্বপ্ন জাগে তাঁর। তবে খামার করার সম্বল না থাকায় দুটি গরু বর্গা নিয়ে তাঁর সেই স্বপ্নের পথে হাঁটতে হয়েছে। বর্গা নেওয়া গরু বিক্রি করে লাভের টাকায় প্রথমে একটি গাভি কিনলেও পর্যায়ক্রমে গাভির সংখ্যা ও আয় বেড়েছে। আয় থেকেই ২০১৬ সালে ৭০ লাখ টাকা দিয়ে খামারের ১২ শতক জায়গা কিনেছেন।

খামার থেকে এখন প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ লিটার দুধ পাওয়া যায় জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি লিটার দুধ ৭০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। শুধু দুধ বিক্রি করেই মাসে আট লাখ টাকার বেশি পাওয়া যায়। খরচ বাদ দিয়েই প্রতি মাসে আয় হয় কমপক্ষে চার লাখ। তবে গবাদিপশুর খাবারের দাম বাড়ায় এখন লাভ প্রত্যাশার তুলনায় কম হচ্ছে।

খামারে মোহাম্মদ হোসেনকে সহায়তা করেন তাঁর দুই ছেলে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহায়
প্রথম আলো

মোহাম্মদ হোসেন বলেন, তাঁর দুই ছেলে, তিন মেয়ে। পুরো পরিবারের খরচ নির্বাহ করা হয় খামারের আয়ে। খামারের আয় দিয়েই ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে ঘর করেছেন। তিনি বলেন, ‘রাত–দিন পরিশ্রম করে এ পর্যায়ে এসেছি। আমার বিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম আর সততা থাকলে কোনো মানুষ ব্যর্থ হয় না। সফলতা অবশ্যই ধরা দেবে।’

হোসেনের দুই ছেলের মধ্যে কামরুল হাসান এবার এসএসসি পাস করেছে, মহি উদ্দিন একটি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। মহি উদ্দিন বলেন, ‘বাবার মতো খামারই আমাদের ধ্যানজ্ঞান। আমরা দুই ভাই পড়ালেখার বাইরে পুরো সময় খামারের পেছনে ব্যয় করি।’

কর্ণফুলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুমন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, মোহাম্মদ হোসেন একজন সফল খামারি। তাঁকে দেখে এলাকার অনেকেই খামার করতে উৎসাহী হচ্ছেন।