সেতু না থাকায় ছয়টি গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। রংপুরের বদরগঞ্জের রাধানগরে
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদে ধোধড়া শাখা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি আড়াই বছর আগে বন্যার পানির তোড়ে ভেঙে যায়। এখন পর্যন্ত সেখানে সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ ছয়টি গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের কুঠিয়ালপাড়া, হাজীপাড়া, ডাঙাপাড়া, পাটোয়ারীপাড়া, দিলালপুর ও বিন্দিরধর গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ ওই সেতুর ওপর দিয়ে উপজেলা সদরে যেতেন। গ্রামগুলোর তিন শতাধিক শিক্ষার্থী সেতু পেরিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করতেন। ২০১৯ সালে সেতুটি ভেঙে পড়ার পর থেকে তাঁদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভুক্তভোগী লোকজন নিজ উদ্যোগে ভাঙা সেতুটির ওপর বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে যাওয়া-আসা করতেন। বর্তমানে সেই সাঁকোটি পচে নড়বড়ে হয়েছে। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লোকজন হেঁটে চলাচল করছেন।

বিন্দিরধর গ্রামের কৃষক মোকছেদ আলী বলেন, ‘আড়াই বছর থাকি আশাত আছনো বিরিজটা (ব্রিজ) হইলো না। আশা ছাড়ি দিছি। হামরা ফসল আবাদ করিয়া ভাঙা বিরিজটার তকনে হাটোত নিয়া বেচপার পারি না। গ্রামোতে কম দামোত বেচে দিবার নাগে। হামার গ্রামের মানুষের কষ্টটা কাঁয়ো দ্যাকে না।’

ওই ছয় গ্রামের অন্তত ১৫ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন ওই সেতু পেরিয়ে পাঠানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঠানপাড়া উচ্চবিদ্যালয়, লালদিঘী ও/এ দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়, লালদিঘী পীরপাল ডিগ্রি কলেজ, বদরগঞ্জ মডেল উচ্চবিদ্যালয়, বদরগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজ ও বদরগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজে শিক্ষার্থীরা যাওয়া আসা করেন। সেতু ভেঙে পড়ার পর থেকে ওই গ্রামগুলোর কৃষকেরা উৎপাদিত পণ্য সহজে হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারছেন না।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন কুঠিয়ালপাড়া গ্রামের মমিনা খাতুন। তিনি বলেন, ধোধড়া নদীর ভেঙে পড়া সেতুর কাছে নেমে অন্তত আড়াই কিলোমিটার পথ হেঁটে বাড়ি পৌঁছতে হয়।

দিলালপুর গ্রামের শিক্ষার্থী জান্নাতী খাতুন বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। সে বলেন, কলেজে যেতে হলে বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার ভাঙা সেতু পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়। এর পর ভয়ে ভয়ে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে রিকশা কিংবা ভ্যানে ওঠে কলেজে পৌঁছাতে হয়। একই উপায়ে বাড়িতে আসতে হয়। এ সমস্যা শুধু তার একার নয়, ছয়টি গ্রামের সব মানুষের।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র রায় জানান, তাঁরা দ্রুত ওই সেতুটি নির্মাণের জন্য চেষ্টা করেছেন।