৭৫ বছর বয়সে সাইকেল চালিয়ে দেখতে গেলেন ২০০ কিমি দূরের মসজিদ

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী আবুল হোসেন শেখের বয়স এখন ৭৫ বছর
ছবি: প্রথম আলো

ইচ্ছা ছিল একটি মসজিদ দেখতে যাওয়ার। এ জন্য এলাকার লোকজন একটি বাসের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু নির্ধারিত ভাড়া দিতে না পারায় আবুল হোসেন শেখকে নিতে রাজি হননি আয়োজকেরা। এ জন্য সাইকেল চালিয়ে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ওই মসজিদ দেখে এসেছেন ৭৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি।

আবুল হোসেন শেখের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার আঠারোখাদা গ্রামের গোরস্তান মসজিদ পাড়ায়। তিনি দেখে এসেছেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় অবস্থিত আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ। মসজিদটির নির্মাণশৈলী দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকেই এসে স্থাপনাটি দেখেন।

আবুল হোসেন শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাইসাইকেল চালায়ে যাতি কোনো সমস্যা হয় না। যেখানে ইচ্ছে থামলাম, আবার চালানো শুরু করলাম। অনেক কিছু দেখতে দেখতে গেলাম।’

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী আবুল হোসেন শেখের জন্ম ১৯৪৭ সালের ৩ মে। সে হিসেবে তাঁর বয়স ৭৫ বছর ৮ মাস। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের বেলকুচির ওই মসজিদের একটি ভিডিও ফেসবুকে দেখেন আবুল হোসেন শেখ। এরপর ওই মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায়ের ইচ্ছে হয় এই প্রবীণের। একই সময়ে স্থানীয় লোকজন বাস ভাড়া করে ওই মসজিদ দেখতে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। যাতায়াতের জন্য জনপ্রতি চাঁদা ধরা হয় ৮০০ টাকা। আবুল হোসেন শেখও তাঁদের সঙ্গে যেতে চেয়েছিলেন। এর জন্য তিনি ৫০০ টাকা দিতে চেয়েছিলেন। তবে আয়োজকেরা তাতে রাজি হননি। এ কারণে নিজের সাইকেল নিয়েই সিরাজগঞ্জের পথে রওনা হন তিনি।

২ জানুয়ারি (সোমবার) ফজরের নামাজ আদায়ের পর বাড়ির কাউকে গন্তব্যের কথা না জানিয়ে বাইসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন আবুল হোসেন শেখ। সঙ্গে ছিল কাপড়ের একটি ব্যাগ, ২ হাজার ২০০ টাকা ও একটি মুঠোফোন। তিনি বলেন, প্রথম রাত তিনি কাটান রাজবাড়ীর ধাপাড়া এলাকায় একটি মসজিদে। পরদিন সকালে সেখান থেকে সকালের নাশতা শেষে আবার রওনা দেন। মঙ্গলবার দিন শেষে রাত কাটান পাবনা জেলার নাজিরগঞ্জ এলাকায় একটি মসজিদে। পরদিন বুধবার দুপুরের পর তিনি পৌঁছান সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকার আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদে।

এই বয়সেও বেশ কর্মঠ আবুল হোসেন শেখ
ছবি: প্রথম আলো

আবুল হোসেন শেখ বলেন, পথে অনেক অচেনা লোকজন তাঁকে আপ্যায়ন করেছেন। কোনো সমস্যায় হয়নি পৌঁছাতে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার এলাকার ওই দলটি বাস নিয়ে পৌঁছান বেলকুচিতে। অন্য মুসল্লিদের সঙ্গে শুক্রবার ওই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন আবুল হোসেন শেখ। পরে পরিবারের সদস্যদের চাপাচাপিতে এলাকার ওই দলটির সঙ্গে বাসে করে বাড়িতে ফেরেন তিনি।  

৯ সন্তানের জনক আবুল হোসেন শেখ একসময় কৃষিকাজ করতেন। ভ্যানও চালিয়েছেন। এখন আছেন অবসরে। চার মেয়ের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। পাঁচ ছেলের কেউ ভ্যান চালান, কেউ ছোটখাটো ব্যবসা করেন, কেউ নির্মাণশ্রমিকের কাজ করেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, এবারই প্রথম না। এর আগেও বাই সাইকেল ও ভ্যান চালিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে গেছেন তিনি। যমুনা সেতু যখন চালু হয়, সে সময়ে ভ্যান চালিয়ে গিয়েছিলেন দেখতে। তা–ও তিনবার। এ ছাড়া সাইকেল চালিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমায় এসেছিলেন দুবার।

আবুল হোসেন শেখের ছেলে মো. ডাবলু বলেন, ‘আব্বা স্বাধীনচেতা, সহজ-সরল মানুষ। আগে থেকেই তিনি ঘুরতে পছন্দ করেন। বয়স হলেও এখনো তাঁর মনোবল প্রবল।’