জরাজীর্ণ ভবনে সব কার্যক্রম বন্ধ

২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে গ্রন্থাগারে বই পড়া ও বই নেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

সিরাজগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির পড়ার ঘরে চেয়ার এলোমেলো, একটি টেবিলের ওপর আরেকটি উল্টো করে রাখা হয়েছে। গতকাল দুপুরে তোলাছবি: প্রথম আলো

গ্রন্থাগারটির বয়স প্রায় দেড় শ বছর। একে ঘিরেই পুরো জেলার সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অযত্ন-অবহেলায় সেই সিরাজগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। চার বছরের বেশি সময় সেখানে বই পড়া ও বই নেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। একে ঘিরে অন্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও নেই। এটি যেন এখন ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

দেশের প্রাচীন গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যে অন্যতম সিরাজগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি। খাদিজা খাতুন ও আশরাফুল আলম সিদ্দিকীর লেখা শতবর্ষী গ্রন্থ পরিচিতি বইয়ে লেখা হয়েছে ১৮৮২ সালে তত্কালীন সুধীজন সিরাজগঞ্জ মিউনিসিপ্যালিটির (পৌরসভা) একটি কক্ষে সিরাজগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি নামের গ্রন্থাগার স্থাপন করেন। তখন এটি স্থাপন করতে অর্থ দিয়েছিলেন জেলার খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব গণিত সম্রাট যাদব চক্রবর্তী, যদুনাথ ন্যায়রত্ন, খন্দকার রজব আলী প্রমুখ।

ওই বই থেকে জানা যায়, ১৯৬৯ সালে সিরাজগঞ্জ মিউনিসিপ্যালিটির কার্যালয়টি (পৌরসভা) ভেঙে ফেলা হয়। বর্তমান সিরাজগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সড়কে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে গ্রন্থাগারটি স্থানান্তর করা হয়। পরে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের আর্থিক সহায়তায় ১৭ শতক জায়গার ওপর দুই কক্ষের একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়।

সিরাজগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি সূত্রে জানা যায়, শুরু থেকে সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত। এটি পরিচালনার জন্য ১৫ সদস্যের একটি পরিচালনা কমিটি রয়েছে। যেখানে পদাধিকারবলে জেলা প্রশাসক সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আগে প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত গ্রন্থাগার খোলা থাকত। একসময় গ্রন্থাগারের কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গে এখান থেকে জেলার বিভিন্ন সাহিত্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। বর্তমানে গ্রন্থাগারে ১০ হাজার বইয়ের একটি তালিকা রয়েছে। ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে গ্রন্থাগারে বই পড়া ও বই নেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

এই লাইব্রেরিতে গ্রন্থাগারিকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আবদুল হালিম ছিলেন গ্রন্থাগারিক। আমি ছিলাম তাঁর সহকারী। প্রতি মাসে আমাদের এক হাজার টাকা করে সম্মানী দেওয়া হতো। পরে আমি অন্যাত্র চলে যাই। হালিম ভাইয়ের মৃত্যুর পর গ্রন্থাগারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।’

গতকাল সোমবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। পাঠকদের বসার আসন এলোমেলো ও টেবিল একটির ওপর আরেকটি উল্টো করে রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকটি আলমারিতে কিছু বই রাখা। সেগুলোর ওপর ধুলা পড়েছে, দীর্ঘদিন আলমারি খোলা হয়নি।

পাশেই একটি কক্ষে স্থানীয় প্রসূন থিয়েটারের নাট্যকর্মীরা মেঝেতে বসে রিহার্সাল করছেন। জরাজীর্ণ ভবনটির দোতলায় আরও একটি নাট্যসংগঠনের বেশ কিছু সরঞ্জাম রাখা। একটি কক্ষে দোকানিরা কিছু ফুল রেখেছেন।

পাবলিক লাইব্রেরির আজীবন সদস্য ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘গ্রন্থাগারটিতে এখনো অনেক মূল্যবান বই রয়েছে। এটি দ্রুত একটি চলমান কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এসে সচল করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহায়তা কামনা করছি।’

জেলা প্রশাসক মীর মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি গ্রন্থাগারটি পরিদর্শন করেছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটিকে সচল করতে ভবন সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’