এলাকায় না এসেও আলোচনায় সংসদ সদস্য আফজাল

কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র

রাত পোহালেই কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। চার চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের নেতা। তবে তাঁদের মধ্যে তিনজন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের দাবি, আফজাল হোসেন নিজেকে আড়ালে রেখে নির্বাচনে একজন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন প্রকাশ্যে কারও পক্ষে অবস্থান নেননি। এমনকি প্রতীক বরাদ্দের পরও এলাকায় এসেছেন কি না, তা কারও জানা নেই। তবুও নিজের কৌশলী অবস্থানের কারণে তিনি আলোচনায় আছেন। উপজেলায় আলোচনা আছে, তিনি আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রেজাউল হকের পক্ষে কাজ করতে নিজের অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী দলের অধিকাংশ নেতা ও সংসদ সদস্যের অনুগত নেতা–কর্মীরা রেজাউলের পক্ষ নিয়ে মাঠ গরম করে রেখেছেন। এই নিয়ে আপত্তি ও ক্ষোভ অপর তিন প্রার্থীর।

প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা অপর তিন প্রার্থী হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাকিবুল হাসান (মোটরসাইকেল প্রতীক), সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন (ঘোড়া প্রতীক) ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন (দোয়াত-কলম প্রতীক)। তাঁদের মধ্যে রাকিবুল হাসান বর্তমান চেয়ারম্যান এবং মোবারক হোসেন আগের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। আর রেজাউল হক ও আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথমবারের মতো নির্বাচন করছেন। চারজনের মধ্যে মোবারক হোসেন আফজালবিরোধী নেতা হিসেবে পরিচিত। অপর তিনজন আফজালের অনুগত হিসেবে পরিচিত।

আফজাল হোসেন নিকলী ও বাজিতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, সভাপতি হওয়ার পর দলে আফজাল হোসেনের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। নেতৃত্ব নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব থেকে বাজিতপুর আওয়ামী লীগ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটি অংশ সংসদ সদস্যের বিরোধী পক্ষ হিসেবে পরিচিত।
চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজাউল হক হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আলাউল হকের ছেলে। আলাউল হক দীর্ঘদিন সংসদ সদস্যবিরোধী মঞ্চে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তবে কয়েক বছর ধরে বিরোধী মঞ্চ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনেন তিনি। এ অবস্থায় রেজাউল হকের পক্ষে সংসদ সদস্যের সমর্থনকে রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করে করা হচ্ছে। এর ফলে উপজেলা নির্বাচনে কেবল চেয়ারম্যান পদে জয়–পরাজয়ের হিসাবে নয়, বরং ভবিষ্যতে দলের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার অনেক সমীকরণ লুকিয়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন দীর্ঘদিন ধরে আফজালের অনুগত থেকে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নির্বাচনে আফজালের আনুকূল্য না পাওয়ায় হতাশ তিনি। আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘একজন প্রার্থীর পক্ষে এমপি সাহেবের এতটা পক্ষ নেওয়া ঠিক হয়নি। তিনি যা করছেন, ফোনে ফোনে। তাঁর সব লোক আনারসের পক্ষে নামিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি নির্বাচনের ভারসাম্য নষ্ট করবে, একই সঙ্গে দলের ক্ষতিও হবে।’

চেয়ারম্যান প্রার্থী মোবারক হোসেন ২০১৯ সালের আগপর্যন্ত আফজালের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ওই বছর উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে সংসদ সদস্যের পক্ষ ছাড়েন তিনি। ওই নির্বাচনে মোবারক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জয় পাননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজনের পক্ষ নিয়ে আফজাল প্রমাণ করতে চাচ্ছেন, বাজিতপুরে তাঁর কথাই শেষ কথা। তিনি আনারস প্রতীকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করেছেন। তিনি নীরব থাকলে নির্বাচনী পরিবেশটা শান্ত ও স্বাভাবিক থাকবে।’

চেষ্টা করেও অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী রাকিবুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে এর আগে তিনি সংসদ সদস্যের ভূমিকা নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে একই অভিযোগ করেছেন।

ফোন বন্ধ থাকায় সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে সংসদ সদস্য এলাকায় আসেননি। বেশির ভাগ সময় ফোনও বন্ধ রাখেন। ভোট দিতেও আসবেন কি না, নিশ্চিত নন তাঁরা।

আনারস প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে নির্বাচনে এমপিদের কারও পক্ষ নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে তিনি আমাকে পছন্দ করেন। তাঁর পছন্দের লোক এবং দলের সব নেতা এখন আমার সঙ্গে আছে।’