বদরগঞ্জে টানা চার দিন বিদ্যুৎ–বিভ্রাট, কোরবানির মাংস নষ্ট হচ্ছে ফ্রিজে

বদরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিরাতেই এলাকায় বজ্রপাতসহ ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে লাইনে থাকা বৈদ্যুতিক ইনস্যুলেটরগুলো নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য বিদ্যুৎ–বিভ্রাট হচ্ছে। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় টানা চার দিন বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের কারণে এবার কোরবানির মাংস কেউ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেননি। এ কারণে অনেকের মাংস ফ্রিজে নষ্ট হয়েছে; আবার অনেকে মাংস সেদ্ধ করে রেখেও বিপাকে পড়েছেন। সেই সঙ্গে ফ্রিজে আগের রাখা সব ধরনের খাবার চার দিনে পচে–গলে নষ্ট হওয়ার অভিযোগ করেছেন বিদ্যুৎ গ্রাহকেরা।

উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা বিদ্যুতের দাবিতে ঈদের দিন সোমবার রাতে দুই দফা মিরাপাড়া বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র লাঠি হাতে এবং গতকাল মঙ্গলবার রাতে চেংমারী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ঘেরাও করেছিলেন। তবুও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়নি বলে গ্রাহকেরা অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগী অন্তত ৩০ জন বিদ্যুৎ গ্রাহক অভিযোগ করেন, গত শনিবার মধ্যরাতে পুরো বদরগঞ্জ উপজেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ঈদের দিন সোমবার রাতে শুধু বদরগঞ্জ পৌরসভার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই পৌরসভা এলাকা আবার বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এরপর গতকাল বেলা দুইটার দিকে পৌর এলাকায় এবং রাত ১০টার দিকে উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের পাঠানেরহাট এলাকায় শুধু বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। তবে রাত ১২টা পর্যন্ত ওই এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করেছে গড়ে ৫০ বার। এ অবস্থায় গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবারও ওই দুই এলাকায় বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। তবে উপজেলার অন্য নয়টি ইউনিয়নে গত শনিবার মধ্যরাতের পর থেকে মঙ্গলবার বেলা তিনটা পর্যন্ত বিদ্যুৎ–সংযোগ চালু করতে পারেনি স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন

স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, উপজেলায় ১০টি ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও গত শনিবার মধ্যরাতের পর থেকে আটটি ফিডার আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত চালু করা সম্ভব হয়নি। গত সোমবার ঈদের দিন মধ্যরাত থেকে পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয় চেংমারী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রও বিদ্যুৎহীন ছিল।

টানা চার দিন ধরে বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের কারণে ফ্রিজে রাখা কোরবানির মাংস নষ্ট হচ্ছে। রংপুরের বদরগঞ্জের একটি বাসায় তোলা
ছবি: প্রথম আলো

দামোদরপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘গত শনিবার মধ্যরাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর আজ বিকেল পর্যন্ত ইউনিয়নের কোথাও বিদ্যুৎ আসেনি। ঈদের দিন গরু-ছাগল কোরবানির অন্তত ৪০ কেজি মাংস ফ্রিজে রেখেছিলাম। সারা রাতেও বিদ্যুৎ না আসায় তা নষ্ট হচ্ছিল। গতকাল রাতে মাংসগুলো সেদ্ধ করেছি। এতে দুর্গন্ধ বেরিয়েছে। এ মাংস খাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না।’ ওই আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, কী এমন সমস্যা হলো চার দিনেও বিদ্যুৎ আসছে না? সাধারণ মানুষ চার দিন ধরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহালেও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা তা আমলে নিচ্ছেন না। তাঁরা ফোনও ধরছেন না। কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণেই বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।

অনেক এলাকায় গত শনিবার মধ্যরাতের পর থেকে আজ বুধবার বেলা তিনটা পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসেনি।

জেলেপাড়া গ্রামের আবদুল কুদ্দুস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কোরবানি দেওয়া মাংস প্রতিবছরেই ফ্রিজে রেখে অনেক দিন পর্যন্ত খাইতাম। এবারে ফ্রিজে মাংস রাখার পরে বিদ্যুতের অভাবে দুর্গন্ধ বেরিয়েছিল। এ অবস্থায় মাংস সেদ্ধ করে রেখেছি; কিন্তু দুর্গন্ধে খাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামের সবাই ফ্রিজ থেকে মাংস বের করে সেদ্ধ করে একই সমস্যায় পড়েছেন।’

আরও পড়ুন

রাধানগর লালদিঘী গ্রামের গৃহবধূ সামসুন্নাহার বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘টানা চার দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে আগে থেকে রাখা ছয় কেজি মাছ ও তিন কেজি মুরগির মাংসসহ অন্য তরিতরকারি সব পচে গলে নষ্ট হওয়ায় ফেলে দিয়েছি।’

আমরুলবাড়ি গ্রামের এম এ মতিন সরকার, আবদুল মজিদ, আলমগীর হোসেন, রামনাথপুরের ইয়াকুব আলী, ইদ্রিস আলী, শওকত হোসেন, তালুক দামোদরপুরের ইয়াছিন আলী, লোহানীপাড়ার বাতাসন গ্রামের আক্তারুল ইসলাম, শাহাদত হোসেনসহ অনেকে অভিযোগ করেন, গত শনিবার মধ্যরাতের পর থেকে আজ বুধবার বেলা তিনটা পর্যন্ত তাঁরা এলাকায় বিদ্যুৎ পাননি। এ কারণে এবার কোরবানি দেওয়া মাংস তাঁরা ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেননি। পাশাপাশি আগে থেকে ফ্রিজে রাখা মাংস ও মাছ চার দিনে ফ্রিজে পচে–গলে নষ্ট হয়েছে।

আফতাবগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার মুদিদোকানি মনোয়ার হোসেন ও তুফানুপাড়া গ্রামের দোকানদার মাজেদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, দোকানে ফ্রিজে রাখা অন্তত ২৫ হাজার টাকার আইসক্রিম গলে নষ্ট হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ বদরগঞ্জ এলাকার উপমহাব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান বলেন, ‘এবার প্রতিরাতেই এলাকায় বজ্রপাতসহ ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে লাইনে থাকা বৈদ্যুতিক ইনস্যুলেটরগুলো নষ্ট হচ্ছে। আমরা সবকিছু সারিয়ে কোনো লাইন চালু করার পরে রাতেই আবার বজ্রপাতে তা নষ্ট হচ্ছে।’ ফ্রিজে কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করতে না পারার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষকে আবার আগের অবস্থানে ফিরে মাংস সেদ্ধ করে রেখে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) খুরশিদ আলম আজ দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাদের লোকজন মাঠে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে পৌরসভাসহ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারব।’