মস্তিষ্কের বিরল রোগে আক্রান্ত পঞ্চগড় বন্ধুসভার সাইফুল, অর্থসংকটে চিকিৎসা হচ্ছে না

সাইফুল ইসলামফাইল ছবি: প্রথম আলো

সামাজিক সেবামূলক কাজ করার পাশাপাশি সমাজের নানা অসংগতি নিয়ে আন্দোলন করা তরুণ সাইফুল ইসলাম মস্তিষ্কের বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রচণ্ড মাথাব্যথার সঙ্গে অবশ হয়ে যাচ্ছে তাঁর বাঁ হাত-পা। সঠিক রোগনির্ণয় না হওয়ায় চিকিৎসকেরা তাঁকে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু অর্থসংকটে তিনি চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

সাইফুল ইসলাম পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের আমলাহার এলাকার কৃষক আবদুল মজিদের ছেলে। তিনি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। প্রথম আলো বন্ধুসভা পঞ্চগড়ের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

সমাজের যেকোনো অন্যায় চোখে পড়লে মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে, বুকে-পিঠে প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে ও হাতে হ্যান্ড মাইক নিয়ে একক আন্দোলনে নামতেন সাইফুল ইসলাম। গুজব ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পায়ে হেঁটে একক পদযাত্রা, মাদক-দুর্নীতি-সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ, কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সচেতনতার বার্তা, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) অচলাবস্থা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে একক অবস্থানসহ নানা দাবিতে সব সময় সরব ছিলেন। করোনাকালে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। তাঁকে নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

চলতি বছরের মার্চে বুকে ও পিঠে ফেস্টুন ঝুলিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সচেতনতার বার্তা নিয়ে সাইফুল ইসলাম ছুটে গিয়েছিলেন সিরাজগঞ্জে। সেখানে প্রচারণা শেষে বাড়িতে ফেরার কয়েক দিন পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথম দিকে প্রচণ্ড মাথাব্যথা থেকে শুরু তাঁর শরীরের নানা জটিলতা দেখা দেয়। বর্তমানে একেবারে শয্যাশায়ী। অন্যের সহায়তা ছাড়া চলাফেরা করতে পারছেন না।

সাইফুল ইসলাম জানান, শরীরের সমস্যা ধরা পড়ার পর তিনি দিনাজপুর ও রংপুরের বিভিন্ন নিউরোলজি বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা নিয়েও কোনো ফল পাননি। এরপর তিনি ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে গিয়েও কোনো সুরাহা পাননি। এরপর অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিউরোলজি বিশেষজ্ঞকে দেখিয়েছেন। কিন্তু অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও কোনো উপকার হয়নি। দিন দিন শরীরে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বাঁ হাত ও পা অবশ হয়ে যায়। পাশাপাশি শরীরের ডান অংশে এ সমস্যা ছড়িয়ে পড়ছে।

সাইফুল প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসকদের ধারণা, তিনি মস্তিষ্কের বিরল ‘এমএস’ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য তাঁকে দ্রুত দেশের বাইরে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর গরিব কৃষক বাবা ইতিমধ্যে তাঁর পেছনে অনেক টাকা খরচ করে ফেলেছেন। বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে অন্তত ১২ লাখ টাকা দরকার। এমন পরিস্থিতিতে সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা চান তিনি।

সাইফুলের বাবা আবদুল মজিদ বলেন, প্রায় চার মাস ধরে ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাঁর সামর্থ্যের সবকিছু শেষ করে ফেলেছেন। এখন সাইফুলকে বিদেশে নিতে অনেক টাকা দরকার। অল্প কিছু জমি ছিল, সেটা মানুষের কাছে বন্ধক রেখে কিছু টাকা জোগাড় করেছেন। কিন্তু এই টাকা দিয়ে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। সমাজের বিত্তবানেরা যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে হয়তো ছেলেটাকে বাঁচাতে পারতেন।