গাজীপুরে অস্তিত্ব সংকটে সরকারি ২ পুকুর

অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদে ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় থেকে একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হলেও দখলদারেরা তাতে নজর দিচ্ছেন না।

পুকুরপাড় দখল করে গড়ে তোলা স্থাপনা। বাসিন্দাদের ফেলা ময়লা-আবর্জনায় পুকুরটি দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। গাজীপুরের শ্রীপুরের মুলাইদ গ্রামের বাওয়া পুকুর। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামে শতবর্ষী দুটি সরকারি পুকুরপাড়ের বেশির ভাগ জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। এখন চলছে ভরাটের পাঁয়তারা। পুকুর দুটি ‘বাওয়া পুকুর’ ও ‘গুইলা পুকুর’ নামে পরিচিত। পুকুর দুটি ঢেকে গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলো উচ্ছেদে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কয়েকবার নোটিশ দেওয়া হলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বাওয়া পুকুরের চারপাশ স্থাপনা দিয়ে ঢাকা। পুকুরে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। দখলদারদের বাড়ির ভেতর দিয়ে পুকুরে পৌঁছাতে হয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব-উত্তর কোণের দিকে ময়লা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। পুকুরের বেশ কয়েকটি জায়গায় সেখানকার বাসিন্দাদের পয়োনিষ্কাশনের ট্যাংক তৈরি করা হয়েছে। পুকুরের উত্তর ও পশ্চিম পাড়ের প্রায় পুরোটাতেই আধা পাকা ঘর তৈরি করা হয়েছে। এসব ঘরের বেশির ভাগ অংশ দোকানপাট হিসেবে বিভিন্ন লোকজনের কাছে ভাড়া দেওয়া। 

বাওয়া পুকুরপাড়ের আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে বাওয়া পুকুরপাড়ে লোকজন বসবাস করছেন। এখানকার অর্ধেকের বেশি বাসিন্দা ভূমিহীন। বাকিরা ভূমিহীন না হয়েও পুকুরপাড়ে ঘরবাড়ি তৈরি করেছেন। এসব ঘরবাড়ি ভাড়া দিয়ে টাকা আয় করছেন তাঁরা। 

বাওয়া পুকুরপাড়ের বাসিন্দা ফিরোজ মিয়া বলেন, তাঁরা প্রায় ৪০ বছর ধরে সেখানকার বাসিন্দা। নিজেদের কোনো জমি না থাকায় পুকুরপাড়ে ঘর করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। সেখানকার বাসিন্দা আল আমিন বলেন, ‘ঘর তৈরি করার পর কেউ কেউ কিছু ঘর দোকান হিসেবে ভাড়া দিচ্ছেন। এতে অন্যায়ের কিছু দেখছি না।’

তেলিহাটি ভূমি অফিস থেকে জানা যায়, বাওয়া পুকুরটি সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি। ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী পুকুরপাড়ের ১৬৯ শতাংশ জমি দখলে রেখেছেন ৩৮ জন। বাকি ১৯৩ শতাংশজুড়ে পুকুর। অবৈধ দখলদারদের সরে যেতে সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর ৩৮ জনের নামে নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে দখলদারদের সব স্থাপনা নিজ খরচে সরিয়ে নিতে বলা হয়। একই ধরনের নোটিশ ২০২১ সালের ২২ জুন ও ২০১৯ সালের ১৭ মে পাঠানো হয়। কিন্তু নোটিশের তোয়াক্কা করেন না দখলদারেরা। তারা সেখানে প্রতিনিয়ত নানা স্থাপনা তৈরি করছেন।

মুলাইদ গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘরগুলো পুকুরপাড়ে তৈরি করা হলেও বর্তমানে পুকুরের জলাশয়ে বর্জ্য ফেলে ভরাট করে সেখানে দখল করার চেষ্টা করছেন বেশ কয়েকজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি না দিলে সরকারি এই পুকুর অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে। 

গুইলা পুকুরটিরও একই অবস্থা। সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে পাড়ের বেশ কিছু জায়গা দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ঘরবাড়ির বেশির ভাগ বিভিন্ন কারখানা শ্রমিকদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ ঘর টিনের তৈরি। কিছু ঘর আধা পাকা ও মাটির তৈরি। পুকুরের জলমগ্ন অংশে বিভিন্ন এলাকা থেকে এনে ময়লা ফেলা হয়। 

পুকুরপাড়ের বাসিন্দা আবু বক্কর বলেন, তাঁদের নিজেদের জমি না থাকায় সেখানে ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। বহু বছর ধরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে থাকছেন। যাওয়ার জায়গা নেই তাঁদের। আসাদুজ্জামান নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, তাঁরা স্বল্প আয়ের মানুষ। তাঁদের উচ্ছেদ করে দিলে তাঁরা চলে যাবেন। কোথায় যাবেন তা তাঁরা জানেন না। 

গুইলা পুকুর সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি। পাড়সহ পুকুরের মোট জমি ৩৩৪ শতাংশ। ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, পাড়ের ১৪১ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ জমি ২০ ব্যক্তির দখলে রয়েছে। দফায় দফায় অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে দখলদারদের নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ এ বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি অবৈধ স্থাপনা নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিতে নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু দখলদারেরা স্থাপনা সরাননি। 

তেলিহাটি ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের উপসহকারী কর্মকর্তা সোলাইমান সরকার প্রথম আলোকে বলেন, বহু বছর ধরে বাওয়া পুকুরের পাড়গুলো বেদখলে আছে। দফায় দফায় নোটিশ দিয়েও দখলদারদের সরানো যাচ্ছে না। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুকুরের জায়গা কাউকে বন্দোবস্ত দেওয়ার সুযোগ নেই। অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হবে।