পরিদর্শন শেষে নেতারা বললেন, ভবদহের ৪ নদী পলিতে ভরাট হয়ে গেছে

যশোরের ভবদহ অঞ্চলের চারটি নদী পরিদর্শন করেছেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতারা। শুক্রবার বিকেলে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শোলগাতিয়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের ভবদহ অঞ্চলের নদীগুলোর অবস্থা দেখতে গিয়েছিলেন ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতারা।

শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাঁরা মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী পরিদর্শন করেন। এরপর খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শোলগাতিয়া এলাকায় হরি নদীর পাড়ে বৈঠক করেন।

বৈঠকে ভবদহের নদীগুলোর বর্তমান অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংগ্রাম কমিটির নেতারা। তাঁরা বলেন, ‘নদীগুলোর অবস্থা ভয়াবহ, যা দেখে আমরা ভীষণ আতঙ্কিত। পলিতে ভরাট হয়ে গেছে নদীগুলো।’

এ কমিটির নেতারা শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে ভবদহে আসেন। এরপর তাঁরা মোটরসাইকেলে করে অভয়নগর উপজেলার বয়ারঘাটা এলাকা থেকে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বারোআড়িয়া এলাকায় চারটি নদীর মোহনা (গ্যারাইল, ভদ্রা, হাবড়াখানা ও জিরাবুনিয়া) পর্যন্ত যান। প্রায় ৬০ কিলোমিটার পথে তাঁরা মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর অবস্থা ঘুরে ঘুরে দেখেন।

এরপর বিকেল চারটার দিকে হরি নদীর পাড়ে শোলগাতিয়া সেতুর পাশে বৈঠক করেন ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতারা।

ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রনজিৎ বাওয়ালীর সভাপতিত্বে বৈঠকে বক্তব্য দেন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির, যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী আবদুল হামিদ ও সদস্য তসলিমুর রহমান।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অভয়নগর উপজেলার ফুলেরগাতী গ্রামের সাধন বিশ্বাস, ডুমুরতলা গ্রামের শিবপদ বিশ্বাস, মনিরামপুর উপজেলার পাড়িয়ালী গ্রামের রাজু আহেমেদ, রোজীপুর গ্রামের দয়ানন্দ হালদার প্রমুখ।

ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতারা বলেন, নদীগুলোতে ভাটার সময় কোথাও আড়াই ফুট, কোথাও তিন ফুট, আবার কোথাও সাড়ে তিন ফুট পানি থাকছে। জোয়ারের সময় পানি বেড়ে আট-নয় ফুট হয়। বায়োআড়িয়া চারটি নদীর মোহনায় জোয়ারের সময় চার থেকে পাঁচ ফুট পানি থাকে এবং ভাটায় চর জেগে ওঠে। এ সময় একটি ক্ষীণধারা প্রবাহিত হয়।

যে অবস্থা, তাতে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হবে না বলে মনে করেন বক্তারা। তাঁরা বলেন, বৃষ্টি হলে ভবদহ এলাকার গ্রামগুলোতে পানি ঢুকবে। দেখা দেবে জলাবদ্ধতা। এবারও অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং যশোর সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে যাবে।

আগামী ৮ জুন সংগ্রাম কমিটির বৈঠক করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান নেতারা। দ্রুত বিল কপালিয়ায় জোয়ারাধার (টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট-টিআরএম) চালুর দাবি জানান তাঁরা।

ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে আমরা বলে আসছি, নদী খননের যে কাজ হচ্ছে, তাতে সমাধান হবে না। বরং অবস্থা খারাপ হবে। এভাবে নদী কাটতে থাকলে এর প্রায় ৫০–৬০ কিলোমিটার পলিতে ভরাট হয়ে যাবে। ২০০ গ্রাম তলিয়ে যাবে। এলাকার ১০ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হবে। হতে চলেছেও তাই।’

ইকবাল কবির আরও বলেন, ‘এখন জলাবদ্ধতা দূর করতে ২০টি বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচের কাজ চলছে। সেচ প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে। এটা একটা ভাঁওতাবাজি। এতে সরকারের অর্থ লোপাট হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে বিল কপালিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের সামনে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আগামী ৮ জুন বৈঠক করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’