লাগামহীন দামে অসহায় সবাই

দোকানের কর্মচারীরা বলেন, দুই বছরের ব্যবধানে অস্বাভাবিকভাবে সব ধরনের কাগজ ও স্টেশনারি মালামালের দাম বেড়েছে।

ক্রেতাদের সঙ্গে বচসা এড়াতে নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে বরিশাল নগরের একটি দোকানে
ছবি: প্রথম আলো

দোকানে ঢুকতেই ক্যাশ কাউন্টারের পাশে একটি নোটিশ। সেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘দৃষ্টি আকর্ষণ, দৈনিক ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় কাগজ, খাতা, স্টেশনারি মালামালের লাগামহীন, আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে আমরা অসহায়।’ বরিশাল নগরের অনামী লেনের মুনশি প্রকাশনী ও প্রেস নামের স্টেশনারি সামগ্রীর এক দোকানে এই নোটিশ টানানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে ওই দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ছয়জন কর্মচারী অলস বসে আছেন। ক্রেতা আছেন মাত্র দুজন।

নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মচারীরা বলেন, খাতা ও স্টেশনারি মালামালের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় প্রায়ই ক্রেতাদের সঙ্গে বচসা হচ্ছে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে দোকানের সামনে নোটিশ ঝুলিয়েছেন তাঁরা। গত ১ আগস্ট তাঁরা নোটিশটি লাগিয়েছেন।

দোকানের কর্মচারীরা বলেন, দুই বছরের ব্যবধানে অস্বাভাবিকভাবে সব ধরনের কাগজ ও স্টেশনারি মালামালের দাম বেড়েছে। করোনা মহামারি–পরবর্তী সময়ে এসব মালের দাম দু–তিন গুণ বেড়েছে।

মুনশি প্রকাশনী ও প্রেসের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঢাকার মোকাম থেকে মাল কিনি। পাইকারেরা একের পর এক দাম বাড়িয়ে চলেছেন। আমরা কী করব! আমাদের পুরোনো ব্যবসা, ক্রেতাদের কাছে আমাদের একটি আলাদা সুনাম আছে। কিন্তু এখন বেশি দামে মাল কিনতে হয়। যখন বিক্রি করতে যাই, তখন ক্রেতাদের ভ্রু কুঁচকে যায়। এমনকি বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতি এড়াতে বাধ্য হয়ে এই নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছি।’

প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, দুই বছর আগে পাইকারি মোকামে প্রতি টন কাগজের দাম ছিল ২০–২১ হাজার টাকা। এখন সেই কাগজ প্রতি টন ৪১ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। ২০২১ সালে রেজিস্টার খাতার প্রতি রিমের দাম ছিল ৫৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। চলতি বছর সেই খাতার রিম তাঁরা ১ হাজার ৯০ টাকায় কিনছেন। ২০২১ সালে ৬৫ গ্রাম কাগজের রিম পাইকারি মোকাম থেকে কিনতেন ১ হাজার ২৮৫ টাকায়। বর্তমানে সেই কাগজের দাম হয়েছে ২ হাজার ৬০০ টাকা। সবচেয়ে বেশি বিক্রীত ৫৫ গ্রাম কাগজ গত বছর ছিল ১ হাজার ৮৫ টাকা। এ বছর তা বেড়ে ২ হাজার ৫০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশি কালি (কোরিয়ান) ২ পাউন্ড এক বছর আগে ছিল ৩৮৫ টাকা, এখন তা হয়েছে ৭০০ টাকা।

ওই দোকানের কর্মচারীদের ধারণা, ঢাকার ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে এমন দাম বাড়িয়েছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। মূল্যবৃদ্ধি হলেও অতিরিক্ত মূল্যে মালামাল কিনে ব্যবসা চালাতে হচ্ছে। অনেকে মূল্যবৃদ্ধির কারণে পোষাতে না পেরে ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। এ ব্যাপারে সরকারের এখনই নজর দেওয়া প্রয়োজন।

শুধু মুনশি প্রকাশনী নয়, নগরের সব স্টেশনারি ব্যবসায়ীর মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে হতাশা আছে। বিএম কলেজ এলাকার বড় ব্যবসায়ী আশরাফিয়া লাইব্রেরির আশরাফ খান প্রথম আলোকে বলেন, যে বইটি আগে ২০০ টাকা ছিল, সেটা এখন পাইকারি কিনতে হচ্ছে ৪০০ টাকায়। ফটোকপির এক প্যাকেট কাগজের দাম আগে ছিল ১৯০ টাকা। এখন সেটার দাম ৪১০ টাকা। দাম বাড়ায় দোকানে ক্রেতা খুব কম। বেচাবিক্রি অনেক কমে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে যাবে।

খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। তবে শিক্ষাসংক্রান্ত এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির নীরব নিষ্পেষণের শিকার অভিভাবকেরা। বিএম কলেজের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নাইমুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে সব সময় সাদা কাগজে লিখেছি। কিন্তু গত মে মাসে সাদা কাগজ প্রতি রিমে ১০০ টাকা বাড়তি। বাধ্য হয়ে এখন নিউজপ্রিন্ট ব্যবহার করছি। একই সঙ্গে বইপত্রের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় এখন আর কেনার সাধ্য নেই। তাই ধার করে পড়ছি, ইচ্ছে থাকলেও অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় বই কিনতে পারি না।’