আতঙ্কে শিক্ষার্থী–অভিভাবকেরা 

স্কুলপড়ুয়া ও লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

টাঙ্গাইল জেলার মানচিত্র

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় কিশোরেরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা সংঘবদ্ধভাবে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। বেপরোয়াভাবে চালাচ্ছে মোটরসাইকেল। সংঘবদ্ধ কিশোরদের কয়েকটি হামলায় গত ছয় মাসে শিক্ষার্থীসহ অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। 

কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, স্কুলপড়ুয়া ও লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তারা বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের সময় ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করছে। অসদাচরণের পাশাপাশি মাদক সেবনের সঙ্গেও তারা নিজেকে জড়াচ্ছে। নিজেদের প্রভাব দেখাতে পরীক্ষা কক্ষে ধারালো অস্ত্র নিয়েও ঢুকছে। 

বখাটে কিশোরদের নিয়ন্ত্রণে অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই তাদের হাতে অভিভাবকেরা মোটরসাইকেল তুলে দিয়ে অপরাধী বানিয়ে দিচ্ছেন।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক অধ্যক্ষ

সূত্র আরও জানায়, উপজেলা সদরে সাধারণত পোস্টকামুরী ও গোড়াইল গ্রামের প্রভাব বেশি। এই গ্রামের কিশোরদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী বাইমহাটী, কুমারজানী, কুতুববাজার, সাহাপাড়া ও মির্জাপুর বাজারের বসবাসকারী কিশোর এবং উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে থাকা তাদের আত্মীয়দের সন্তানেরা কিশোর দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নানা অপরাধ করছে। যাদের অধিকাংশই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময় বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠে। তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ অভিযোগ করতে সাহস পান না। এমনকি সংঘবদ্ধ কিশোরদের হামলায় প্রভাবশালী ওই দুই গ্রামের দুই ব্যবসায়ীও রেহাই পাননি।

উপজেলা সদরের বাওয়ার কুমারজানী রোডে ভাড়া বাসায় বসবাসকারী একজনের নেতৃত্বে সম্প্রতি গোড়াইল গ্রামের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ও পোস্টকামুরী গ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মতিউর রহমানের ওপর হামলা হয়। কিশোর দলের নেতৃত্বদানকারী ওই ব্যক্তির নানার বাড়ি পোস্টকামুরী। আর বিয়ে করেছেন গোড়াইল গ্রামে। তাদের হামলার শিকার সাইফুল ঢাকার একটি হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন। এ ছাড়া কিশোরদের একই দলের সঙ্গে না চলায় বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে স্কুলছাত্র দিনারকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সমাপনী পরীক্ষায় মির্জাপুর সরকারি সদয় কৃষ্ণ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে খাতা না দেখানোর অপরাধে উপজেলার দরানীপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী ফাহাদ, জামিল ও জাহাঙ্গীরের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে কয়েকজন কিশোর হামলা করে। এতে গুরুতর আহত জামিল কুমুদিনী হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেয়। 

অনেক সময় ভুক্তভোগীরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেন না। এ জন্য আইনি পদক্ষেপও নেওয়া যায় না। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।
শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম, ওসি, মির্জাপুর থানা

এর আগে মির্জাপুর সরকারি সদয় কৃষ্ণ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা কক্ষে চাপাতি নিয়ে প্রবেশের অভিযোগে সামির আলী নামে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। 

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মির্জাপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কিশোর দলের হামলায় উপজেলার কুর্ণী গ্রামের কয়েকজন এসএসসি পরীক্ষার্থী আহত হয়। তাদের মধ্যে সিফাত নামে একজনকে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার বিচার দাবিতে ওই গ্রামের লোকজন বেলা দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত এক ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। 

খবর পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ ঘটনাস্থলে যান। পরে সেখানে তিনি এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর সার্কেল) এসএম মনসুর মুসা ও মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে আশ্বাস দেন। 

গোড়াইলের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, কিশোরেরা যেভাবে বখাটে হয়ে উঠছে, তাতে অভিভাবকেরা আতঙ্কিত। তারা মাদকও গ্রহণ করছে। অভিভাবকদের সব সময় উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়।

মির্জাপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বখাটে কিশোরদের নিয়ন্ত্রণে অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই তাদের হাতে অভিভাবকেরা মোটরসাইকেল তুলে দিয়ে অপরাধী বানিয়ে দিচ্ছেন। এ থেকে সতর্ক থাকতে হবে। নিজেদের সন্তানেরা অপরাধ করতে কোনো ধরনের তদবির না করে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে।’

মির্জাপুর থানার ওসি শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম জানান, কিশোরদের কাছে থাকা মোটরসাইকেল আটকের মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। অনেক সময় ভুক্তভোগীরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেন না। এ জন্য আইনি পদক্ষেপও নেওয়া যায় না। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।