তীব্র শীতে নওগাঁয় নিউমোনিয়ার প্রকোপ, প্রতিদিন গড়ে ১৫০ রোগী ভর্তি

তীব্র শীতে নওগাঁয় নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। শয্যা খালি না থাকায় অনেকে মেঝেতে শয্যা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডেছবি: প্রথম আলো

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নওগাঁয় জেঁকে বসেছে শীত। এক সপ্তাহ ধরে সূর্যের দেখা নেই বললেই চলে। ঘন কুয়াশা আর মৃদু শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ। তীব্র শীতের মধ্যে জেলায় ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে।

গত এক সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া ডায়রিয়া ও ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিপুলসংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে নওগাঁর ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ২৪৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। আর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৭২ জন। তাদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি। গত সাত দিনে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলার ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে ৭২৮ জন।

সিভিল সার্জন আবু হেনা মো. রায়হানুজ্জামান বলেন, হিসাব করে দেখা গেছে, ৩-৪ দিন ধরে জেলার ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর হাসপাতাল মিলে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ রোগী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। এটাকে ঠিক প্রকোপ বলা যাবে না। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এ সংখ্যা বেশি। তীব্র শীতই মূলত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী। তবে ঠান্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যাপ্ত মজুত আছে। এ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য কম্বলের ব্যবস্থা রয়েছে।

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৬৯৬ ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৩৯৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে ২৮৭ জন নিউমোনিয়া ও ৬৬৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই শিশু।

সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহিদ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তীব্র শীতের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। ঠান্ডার কারণে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত এসব রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তাদের সব সময় গরম পরিবেশে রাখতে হবে। ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য সব সময় গরম খাবার খেতে হবে। কোনো সময় ঠান্ডা বা পচা-বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না।

আরও পড়ুন

বৃহস্পতিবার হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, রোগী ও স্বজনদের চাপে পা ফেলার জায়গা নেই। শয্যাসংকটের কারণে অনেক রোগীকে মেঝেতে শুইয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ৭৫ শয্যার ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি ছিল ১৪৩ জন। এর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী ৩৭। বাকিরা ডায়রিয়া, ঠান্ডা জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। কোনো কোনো শয্যায় দুই-তিনজন করে শিশুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সদর উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে হামার সাত মাসের ছেলেটার সর্দি লাগিছে। দুই দিন হলো সর্দি বেশি হয়ে গেছে। বাচ্চাটা বুকের দুধও খ্যাতে পারিচ্ছে না। বুধবার হাসপাতালের ডাক্তার দেখে বলল, বাচ্চার নাকি নিউমোনিয়া হয়ে গ্যাছে। হাসপাতালে ভর্তি করা লাগবে। হাসপাতালে ভর্তির পর ওষুধ খাওয়াচ্ছি। আবার নাকে গ্যাস (নেবুলাইজার) দ্যাওছে। গ্যাস দ্যাওয়ার পর বাচ্চাডার অবস্থা এখন একটু ভালো।’

শিশু ওয়ার্ডের জ্যেষ্ঠ নার্স নাসিমা আখতার বলেন, এক সপ্তাহ ধরে নওগাঁয় তীব্র শীত পড়ছে। এখন প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে। তাদের বেশির ভাগই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। শিশুদের সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকদের পাশাপাশি তাঁদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের শ্বাসকষ্ট বেশি থাকলে নেবুলাইজার দেওয়া হচ্ছে। এই রোগ থেকে সেরে উঠতে ৭-৮ দিন সময় লাগছে।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের পাশাপাশি ডায়রিয়া ও ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। বৃহস্পতিবার নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতলের শিশু ওয়ার্ডে
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে শীত অসহনীয় হয়ে ওঠায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। শুক্রবার দুপুর ১২টা নওগাঁ শহর ও আশপাশের এলাকায় সূর্যের দেখা মেলেনি বললেই চলে। মাঝে দুপুরে ঘণ্টাখানেক সূর্য দেখা যায়। সড়ক-মহাসড়কে বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যানগুলোকে দিনের বেলা হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

নওগাঁর বদলগাছি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল নয়টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে।