শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অবশেষে উপাধ্যক্ষের পদ ছেড়ে দিতে সম্মত হয়েছেন বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের উপাধ্যক্ষ এস কাইয়ুম উদ্দীন আহমেদ।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও অনড় অবস্থানের ফলে আজ মঙ্গলবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবরে একটি বদলির আবেদন করেন । একইসঙ্গে ‘আমি পদত্যাগ করলাম’ লেখা একটি কাগজে স্বাক্ষর করে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠান।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বিএম কলেজের উপাধ্যক্ষ এস কাইয়ুম উদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার, ছাত্রলীগকে প্রশ্রয় দিয়ে নানা অনিয়ম, কলেজের শিক্ষক সমিতিসহ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠনে নিজের লোকদের বসানোর অভিযোগ এনে তাঁর পদত্যাগের দাবি জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও জানান, উপাধ্যক্ষ এস কাইয়ুম উদ্দীনের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল সোমবার কলেজে বিক্ষোভ মিছিল করে তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করার সময় দেন শিক্ষার্থীরা। আজ বেলা ১১টায় সেই সময়সীমা শেষ হয়। কিন্তু উপাধ্যক্ষ এই সময়সীমার মধ্যে পদত্যাগ বা অন্যত্র বদলির জন্য আবেদন না করায় পুনরায় বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে অধ্যক্ষ আমিনুল হক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবিতে অনড় থাকেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশে বলেন, ‘আমরা উপাধ্যক্ষ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ক্যাম্পাস ত্যাগ করব না।’ সমাবেশে বক্তব্য দেন কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন, সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী লাবণ্য, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আকবর নবীন প্রমুখ।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলার মধ্যেই বেলা দুইটার দিকে উপাধ্যক্ষ এস কাইয়ুম উদ্দীন তাঁর অফিস কক্ষের পেছনের দরজা দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা তা টের পেয়ে প্রতিরোধ করেন। এরপর তাঁর কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে আজ বেলা তিনটার মধ্যে তাঁকে পদত্যাগ করার আলটিমেটাম দিয়ে প্রশাসনিক কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকেন তাঁরা।
এ সময় শিক্ষার্থীদের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তিনি পদত্যাগ বা বদলির আবেদন না করলে তাঁরা ক্যাম্পাস না ছাড়ার হুঁশিয়ারি দেন। পরে বিকেল পৌনে চারটার দিকে উপাধ্যক্ষ কাইয়ুম উদ্দীন অধ্যক্ষের কাছে তাঁর বদলির আবেদন এবং একটি পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে শিক্ষার্থীদের কাছে বদলির আবেদন ও পদত্যাগপত্রের কপি পাঠালে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন।
এ বিষয়ে বিএম কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল হক বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী আইনগতভাবে উপাধ্যক্ষ পদত্যাগ করতে পারেন না। নিয়ম অনুযায়ী তিনি (উপাধ্যক্ষ) বদলির আবেদন করতে পারেন। তিনি তা-ই করেছেন। আমার কাছে বদলির আবেদন জমা দিয়েছেন। এখন সেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। এরপর মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।’ পরিস্থিতি এখন শান্ত বলেও জানান অধ্যক্ষ।