বিপাকে দুধ ও মাছ ব্যবসায়ীরা

যশোর শহরে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি দুধ বিক্রি করেন পবিত্র ঘোষ
ছবি: প্রথম আলো

পবিত্র ঘোষ নিজের একটি মোটরসাইকেলে চড়ে যশোর শহরে মানুষের বাড়ি বাড়ি দুধ বিক্রি করে সংসার চালান। মাস চুক্তিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অন্তত ২৫০টি বাড়িতে তিনি দুধ পৌঁছে দেন। এর জন্য তাঁর মোটরসাইকেলে আগে দিনে ২০০ টাকার পেট্রল খরচ হতো। মূল্যবৃদ্ধির পর এখন দৈনিক অতিরিক্ত ১০০ টাকার পেট্রল খরচ বাড়বে। মাসে অন্তত তিন হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ বাড়ছে। এ খরচ সামাল দিতে দুধের দাম কেজিতে তিন টাকা বাড়ানোর চিন্তা করছেন তিনি। যার প্রভাব পড়ছে সরাসরি ভোক্তার ঘাড়ে।

যশোর সদর উপজেলার চূড়ামনকাঠি গ্রামের পবিত্র ঘোষের মতো প্রান্তিক দুধ ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত খরচের চাপ সামাল দিতে পণ্যের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, উৎপাদক ও ভোক্তা—সবাইকে অতিরিক্ত খরচের জোগান দিতে নতুন যুদ্ধে নামতে হচ্ছে।

পবিত্র ঘোষ মোটরসাইকেলের দুই পাশে ৫০ লিটার ওজনের দুটি ড্রাম নিয়ে সকাল থেকে ছুটে চলেন যশোর শহরের নানা প্রান্তে।

পবিত্র ঘোষ বলেন, ‘১৫টি দুধের গরুর একটি খামার রয়েছে আমার। সেখানে নিজে দুধ উৎপাদন করি। পাশের খামার থেকেও দুধ কিনে বিক্রি করি। গোখাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় দুধ উৎপাদনের ব্যয় আগেই বেড়েছে। এখন আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল। মোটরসাইকেলে করে নিজে শহরের অন্তত ২৫০ থেকে ৩০০ বাড়িতে প্রতিদিন দুধ পৌঁছে দিই। এখন প্রতিদিন ১০০ টাকার অতিরিক্ত পেট্রল খরচ হচ্ছে। খরচ সামাল দিতে প্রতি লিটার দুধে অন্তত তিন টাকা দাম বাড়াতে হবে। এতে অনেকে হয়তো দুধ নেওয়া বন্ধ করে দেবেন।’

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে যশোরের মৎস্য খাতে। যশোরের হ্যাচারিতে উৎপাদিত রেণু ও পুকুরে উৎপাদিত পোনা সারা দেশের মৎস্য খামারে পাঠানো হয়।

যশোর সদর উপজেলার মাতৃ হ্যাচারির মালিক জাহিদুর রহমান গোলদার বলেন, ‘আমার হ্যাচারিতে করোনার আগে বছরে সাত হাজার কেজি রেণু উৎপাদন হতো। করোনার প্রভাবে সেই উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং, মাছের খাদ্য ও উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আগেই বেড়েছে। ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে এখন খরচ আরও বাড়বে। এবার অনাবৃষ্টির কারণে মাছ চাষ কমে গেছে। রেণু পোনার চাহিদাও কমেছে। ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

জানতে চাইলে যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ফিরোজ খান বলেন, যশোরে ১১৯টি মাছের রেণু উৎপাদনের হ্যাচারি রয়েছে। এর মধ্যে রুই, কাতলাসহ কার্প–জাতীয় মাছের ৩৬, তেলাপিয়া বা মনোসেক্সের ২৩ ও শিং-মাগুর-কই মাছের রেণু উৎপাদনের হ্যাচারি রয়েছে ৬০টি। এখানকার রেণু সারা দেশে পাঠানো হয়। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলে রেণু মারা যায়। এ জন্য ডিজেলচালিত সেচপাম্পের ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। এখন ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ৪০ শতাংশ উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সেই তুলনায় তাঁরা রেণুর দাম বাড়াতে পারছেন না। কারণ, মাছ চাষ করার মতো টাকা মানুষের হাতে থাকছে না। মৎস্য খাত রক্ষায় সরকারি ভুর্তকি ও প্রণোদনা বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।