মা–বাবাকে দাওয়াত না করায় স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ

নিহত রুমানার স্বজনেরা আহাজারি করছেন।সোমবার সকালে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলায় ছেলের জন্মদিনে মা–বাবাকে দাওয়াত না করায় স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে স্বামী হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার বাঘাইকান্দী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূর স্বজনেরা এ অভিযোগ করেন।

নিহত গৃহবধূর নাম রুমানা বেগম (২১)। তিনি বাঘাইকান্দি এলাকার প্রবাসী রুহুল আমিনের মেয়ে এবং একই এলাকার নাদিম দেওয়ানের স্ত্রী। ২০২০ সালে নাদিম ও রুমানার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাঁদের ঘরে রাফসান নামে দুই বছরের এক ছেলে আছে।

নিহত রুমানার ছোট ভাই রনি ব্যাপারী বলেন, ‘আমরা দুই ভাই–বোন ছিলাম। রুমানা বড় ছিল। রুমানার সংসারে আমার বাবা টাকা–পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করতেন। গতকাল শুধু নাদিমের মা–বাবাকে কেন দাওয়াত দেওয়া হলো না, এই ঘটনার জের ধরে আমার বোনটাকে মেরে ফেলল। আমি আমার বোনের হত্যাকারীর বিচার চাই।’

স্বজনেরা লাশ নিতে হাসপাতালে এসেছেন। সোমবার সকালে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

নিহত নারীর স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার নাদিম-রুমানা দম্পতির একমাত্র ছেলে রাফসানের জন্মদিন ছিল। রুমানা তাঁর ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে ছিলেন। জন্মদিন উপলক্ষে সন্ধ্যায় রুমানার বাবার বাড়িতে মিলাদের আয়োজন করা হয়। বিকেলে ছেলের জন্য কেক আনতে মুন্সিগঞ্জ শহরে যান রুমানা। সন্ধ্যায় জন্মদিনের মিলাদ হয়। পরে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। নাদিম সন্ধ্যায় রোমানাদের বাড়িতে যান। ছেলের জন্মদিনে নাদিমের মা–বাবাকে কেন দাওয়াত করা হয়নি, এ নিয়ে ঝগড়া শুরু করেন নাদিম। একপর্যায়ে ছেলেকে নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসেন তিনি। রাত ৯টার দিকে রুমানা তাঁর ছেলেকে আনার জন্য তাঁর মামাকে নাদিমদের বাড়িতে পাঠান। নাদিম ছেলে দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছেলে রাফসানকে আনতে নাদিমদের বাড়িতে যান রুমানা। সেখানে আবার দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রোমানাকে ছুরিকাঘাত করেন নাদিম। গুরুতর আহত অবস্থায় রোমানাকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আজ সোমবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, গত রাত পৌনে ২টার দিকে ওই নারীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর শরীরে ও গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন আছে।
নিহত রুমানার ফুপু সাথি বেগম বলেন, ‘পারিবারিকভাবে কত আনন্দ–ফুর্তি করে তিন বছর আগে আমাদের একমাত্র ভাতিজিকে নাদিমের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলাম। বিয়ের এক বছর পর্যন্ত তাদের সংসার ভালোই চলছিল। রাফসান হওয়ার পর থেকেই নাদিম ঝগড়াঝাঁটি শুরু করে। গতকালকেও বিনা কারণেই ঝগড়াঝাঁটি করে মেয়েটিকে মেরে ফেলা হলো।’

মুন্সিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্দার খাইরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত নাদিম পলাতক আছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্তের মা ও বোনকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।