গাজীপুরের শ্রীপুরে নদী-খাল দূষণ ও দখলের চিত্র পরিদর্শনে গিয়ে পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকার লাবলং খাল পরিদর্শন করে স্থানীয় বাসিন্দাদের এ পরামর্শ দেন তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কমিশনের অন্য কর্মকর্তারা।
নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের আসার খবর পেয়ে সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় অন্তত ৫০ জন বাসিন্দা এসে জড়ো হন। তাঁরা চেয়ারম্যানের কাছে তাঁদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, খালে ময়লা ফেলার ফলে বর্জ্যমিশ্রিত পানিতে তাঁদের কৃষি ফসলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
মনজুর আহমেদ চৌধুরী বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায় শ্রীপুর পৌর এলাকার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি লবলং খাল পাড়ে এসে পৌঁছান। সেখানে নামতেই তাঁকে ঘিরে ধরেন স্থানীয় লোকজন। তাঁরা লবলং খালের দূষণের জন্য শ্রীপুর পৌর কর্তৃপক্ষের বর্জ্য ফেলাকে দায়ী করে কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে এর প্রতিকার চান। পৌর বর্জ্য ফেলে খালের গভীরতা কমিয়ে ফেলাসহ বিপর্যস্ত পরিবেশ সম্পর্কে সবাই চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করতে থাকেন।
সেখানে উপস্থিত পরিবেশকর্মী মো. খোরশেদ আলম ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্দেশ করে কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র মো. আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলা করতে পারবেন? আমরা সঙ্গে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘নদী কমিশনের সবাই এসে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে বলার পরেও তাঁরা তো মানেনইনি, বরং আরও বেশি ময়লা ফেলা হয়েছে সেখানে। দ্রুত তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেন। তাঁকে আমাদের মিটিংয়ে ডাকেন।’
উপস্থিত বিক্ষুব্ধ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উদ্দেশে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘এসব ময়লা ফেলার কারণে আমরা মেয়রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করব। তাঁকে বরখাস্ত করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেব।’
এর আগে দুইবার শ্রীপুরের একই এলাকার খাল দখল ও দূষণের চিত্র পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান। সেগুলো কাজে লাগেনি বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ। আজকের পরিদর্শনে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না, জানতে চাইলে মনজুর আহমেদ চৌধুরী উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘এটা (লবলং খাল) পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব কার, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের, না মেয়রের, নাকি স্থানীয় প্রশাসনের? তাদের আপনারা প্রশ্ন করেছেন? তাঁরা তো নিজেদের দায়িত্ব পালন করেনি।’
কমিশনের চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ করে স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবদুল হাই বলেন, ‘এখানে যারা ময়লা ফেলে, তারা বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতাশালী লোক।’ তখন কমিশনের চেয়ারম্যান ওই ক্ষমতাশালী লোকদের নাম জানতে চান। কিন্তু আবদুল হাই তাৎক্ষণিক নাম বলতে চাননি। এরপর কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, ‘এক মুরব্বি ভদ্রলোক কারা ময়লা ফেলে, তাদের নাম বলতে চান না। উনি ভাবছেন ওনাকে মেরে ফেলবে। আওয়ামী লীগ এতই খারাপ পার্টি? আপনাকে মেরে ফেলবে? আপনি নামটা বলেন। আপনাকে কে কী করতে পারত? এর জন্যই তো আপনাদের এ রকম হয়েছে। যারা ময়লা ফেলছে, তাদের ধরে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতেন।’
লবলং খালের চিত্র পরিদর্শনের পর পাশের প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামে কারখানার তরল বর্জ্য পরিশোধন করার জন্য শোধনাগার (ইটিপি) পরিদর্শনে যান নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান। এ সময় সেখানে যন্ত্র দিয়ে ইটিপি থেকে বেরিয়ে যাওয়া পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। প্যারামিটার অনুযায়ী, পানির বিভিন্ন মাত্রা সঠিক থাকলেও বেরিয়ে যাওয়া পানির রং নিয়ে তিনি আপত্তি করেন। বিষয়টি দেখার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন তিনি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আজ দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র মো. আনিছুর রহমানের মুঠোফোনে বারবার কল করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। ফলে এ বিষয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।