কনকনে শীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাফ ম্যারাথনে ৩৫০ জন

শীতের সকালে রোদ মেখে বিভিন্ন দূরত্বের ম্যারাথনে অংশ নেন দৌড়বিদেরা। আজ সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহরের তিতাস নদীর প্রথম সেতু এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

কনকনে শীত নিয়ে এসেছে হিমেল হাওয়া। ঘরের বাইরে বেরোলেই সেই হাওয়া শরীরে কাঁপন ধরায়। এমন আবহাওয়ার মধ্যে আজ শনিবার ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের তিতাস নদীর প্রথম সেতু এলাকায় জড়ো হন বিভিন্ন জেলার ৩৫০ দৌড়বিদ। সেখানে তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ ও শিশুরাও। তবে উচ্ছ্বাস প্রকাশে যেন কেউ কারও থেকে কম নয়। হাফ ম্যারাথনে অংশ নিতেই তাঁদের এই জমায়েত।

আজ সকালে এই হাফ ম্যারাথনের আয়োজন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রানার্স কমিউনিটি (বিআরসি)। আয়োজকেরা জানান, চার পর্যায়ের দূরত্বে এই হাফ ম্যারাথন দৌড় হয়। এর মধ্যে ছিল ২ কিলোমিটার, ৫ কিলোমিটার, ১০ কিলোমিটার ও ২১ কিলোমিটার।

আয়োজক, অংশগ্রহণকারী ও স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, সূর্য ওঠার আগেই ভোর পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে দৌড়বিদেরা জেলা শহরের তিতাস নদীর প্রথম সেতুর ওপর জড়ো হতে শুরু করেন। সকাল ৬টায় প্রথমে ২১ কিলোমিটার ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণকারীরা সেখান থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে ৫ ও ১০ কিলোমিটারের দৌড়বিদেরা রওনা দেন। সর্বশেষ সকাল ৭টায় শিশুদের দুই কিলোমিটারের দৌড় শুরু হয়।

২১ কিলোমিটার দৌড়ে অংশ নেন ৬৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৪ জন ও নারী একজন। ১০ কিলোমিটারে অংশগ্রহণ করেন ১৬৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৬৬ জন ও নারী দুজন। ৫ কিলোমিটারে অংশ নেন ৭৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৪ জন ও নারী ১০ জন। ২ কিলোমিটার দৌড়ে ৪৩ জন শিশু অংশ নেয়।

দৌড় প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বয়সী দৌড়বিদের পাশাপাশি ভারত, জাপান, নেপাল ও ডেনমার্কের চারজন অংশ নেন। জেলা শহরের তিতাস নদীর ওপর নির্মিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর উপজেলার সংযোগ সড়ক কালীবাড়ি মোড় থেকে বিজয়নগরের নূরপুর জিসি সড়ক (সিমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পথে দৌড়বিদেরা ছড়িয়ে পড়েন। নির্দেশিত পথ ধরে প্রত্যেকে নিজের নির্ধারিত দূরত্ব অনুযায়ী দৌড় সম্পন্ন করেন।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মুহাম্মদ আবদুল মতিন বলেন, ‘১০ কিলোমিটার দৌড়ে অংশ নিয়েছি। ভালো লাগছে। হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত হাঁটা ও দৌড়ের বিকল্প নেই।’

দৌড় শেষের ফিনিশিং লাইনে পৌঁছান এক দৌড়বিদ
ছবি: প্রথম আলো

১০ কিলোমিটার দৌড়ে অংশ নিয়েছেন জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আজম। তিনি বলেন, মাদক ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে খেলাধুলা ও দৌড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

রানার্স কমিউনিটি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘শরীর সুস্থ রাখতে’ স্লোগান নিয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সংগঠনের প্রধান উদ্যোক্তা অলি আহাদ বলেন, দৌড়ের মাধ্যমে সুস্থ, সচেতন ও রোগমুক্ত নাগরিক গড়ে তোলাই তাঁদের লক্ষ্য।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আরমান চৌধুরী ২১ কিলোমিটার দৌড় ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিটে শেষ করেন। শেষে শহরের শিমরাইলকান্দি তিতাস প্রথম সেতু–সংলগ্ন উত্তর পাশে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রানার্স কমিউনিটির উপদেষ্টা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক দিলারা আক্তার খান। অংশগ্রহণকারীদের জন্য শুভেচ্ছা স্মারক, সনদ, টি-শার্ট ও সকালের নাশতার ব্যবস্থা ছিল। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের ট্রফি ও নগদ অর্থ পুরস্কার দেওয়া হয়।

এ আয়োজন বাস্তবায়নে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স ও বিসমিল্লাহ ডেন্টাল কেয়ারসহ ১৩টি প্রতিষ্ঠান সহায়তা দেয়। মেডিকেল সেবা দেয় লাইফ ফিজিওথেরাপি সেন্টার। আয়োজনে কাজ করেন ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবক ও পরিচ্ছন্নতায় সহায়তা করে বিডি ক্লিন।