বরিশালে শিক্ষার্থীরা জানল প্লাস্টিক-পলিথিন ব্যবহারের ভয়াবহতা

বরিশাল সদরের চহুতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেলার পলিথিন-প্লাস্টিক বর্জন এবং বিকল্প ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ’ শীর্ষক সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান হয়। মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যালয় মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

‘আমরা আগে জানতাম না প্লাস্টিক ও পলিথিন মানুষ ও প্রকৃতিকে নীরবে এত ক্ষতি করে! আগে শুধু শুনতাম, এগুলো খুব ক্ষতিকর। কিন্তু কীভাবে ও কী ক্ষতি করে, জানতাম না। আজ বুঝলাম, এটা মানুষ ও পৃথিবীর জন্য কত বড় অভিশাপ। তাই আজ থেকে শপথ করছি, আমি পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহার করব না। পরিবার-প্রতিবেশীদেরও ব্যবহার না করতে সচেতন করব।’

বরিশাল সদর উপজেলার কাশীপুর এলাকার চহুতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান এভাবেই কথাগুলো বলছিল। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এই বিদ্যালয়ে পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) উদ্যোগে ‘একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জন এবং বিকল্প ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ’ শীর্ষক সচেতনতামূলক স্কুল ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়।

বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী সিফাত উল্লাহ বলছিল, ‘পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য বর্জনের জন্য উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বাজারে, পরিবারে মানুষের সামনে এর বিকল্পগুলো সহজলভ্য করতে হবে। পলিথিনের উৎপাদন বন্ধ করতে উদ্যোগ নিতে হবে। এর বিরুদ্ধে সামাজিক যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।’

শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা আগে দেখত, লোকজন বাজার-সদাই করতে খাড়াই (বাঁশ-বেতের ঝুড়ি), কাপড়, চট দিয়ে তৈরি ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতেন। এখন খালি হাতে যান। ফিরে আসেন পলিথিন, প্লাস্টিকের ব্যাগ নিয়ে। এটা বন্ধ করতে হলে আগের অভ্যাসে ফিরে যেতে হবে। তাহলে পলিথিনের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমে যাবে।

অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন চহুতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার খান, সহকারী শিক্ষক ফাহমিদা আফরোজ মিতু, তানিয়া আক্তার ও মো. সফিউল্লাহ। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে শিক্ষার্থীদের পলিথিন ও প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে মৌলিক বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের বিভাগীয় সমন্বয়ক ও গবেষক রফিকুল আলম ও পরিবেশবাদী সংগঠন আরডিপির প্রধান নির্বাহী মো. জাকির হোসেন। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বেলার বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক লিঙ্কন বায়েন। এরপর প্লাস্টিক-পলিথিনের দূষণ ও বিকল্প ব্যবহার–সম্পর্কিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে লিঙ্কন বায়েন বলেন, ‘ব্যবহারের পর আমরা যে প্লাস্টিক-পলিথিন ফেলে দিই, তা মাটি ও পানিতে অপচনশীল অবস্থায় মিশে যায়। দীর্ঘ সময় পরিবেশে অবস্থানের ফলে প্লাস্টিক দ্রব্যাদি মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয় এবং সরাসরি প্রাণীর খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে। ফলে মানবজাতি ও প্রাণিকুল নানা ধরনের প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে দেশে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে ২০১৯ সালে বেলাসহ ১০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও আলোচনায় উঠে আসে। বক্তারা বলেন, গ্রিনপিসের তথ্যমতে, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের বোতল পুরোপুরি ধ্বংস হতে সময় লাগে এক হাজার বছর। আর প্লাস্টিকের ব্যাগ ধ্বংস হতে সময় লাগে ৪৫০ বছর। অন্যদিকে সামান্য প্লাস্টিকের স্ট্র পৃথিবীতে ৭০০ বছর বিদ্যমান থাকে।

পরিবেশগবেষক রফিকুল আলম বলেন, সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতালির বিজ্ঞানীরা মায়ের বুকের দুধে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পেয়েছেন। তাই প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহারে তাঁদের উদ্যোগী হতে হবে। প্লাস্টিকের মাইক্রোকণা নিউরনের সঙ্গে মিশে নিউরন, তথা মস্তিষ্ককে অকার্যকর করে তোলে। স্বাভাবিক চিন্তাশক্তিকে দুর্বল করে দেয়। তিনি বলেন, প্লাস্টিক ও পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহার পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে। এ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জন করতে হবে।