পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় ভাঙনের হুমকিতে দুই কিলোমিটার বাঁধ
শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের পুরো দুই কিলোমিটার অংশ ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। বাঁধের কাছে বিভিন্ন স্থানে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ভাঙন দেখা দেওয়ায় তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নদী ভেঙে বাঁধের কাছে চলে আসায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে পদ্মা সেতুর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর বাজার ও চারটি গ্রামের অন্তত ৫৫০ বসতবাড়ি।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, গত বছর নভেম্বরে ওই বাঁধের জাজিরা প্রান্তের নাওডোবার জিরো পয়েন্ট এলাকায় ১০০ মিটার অংশ নদীতে ভেঙে পড়েছে। এরপর ওই বাঁধটিতে সমীক্ষা চালায় পাউবো ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। সমীক্ষায় দেখা যায়, এক কিলোমিটার অংশে বাঁধের কাছে নদী গভীর। সেখানে তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আর বাকি ১ কিলোমিটার অংশের বাঁধের কাছে নদী চলে এসেছে। সেখানেও মাটি ভেঙে নদীতে পড়ছে।
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার বণিক প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর ওই বাঁধের যে ১০০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছিল, তা সংস্কার করা হচ্ছে। ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এর বাইরেও বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকি রয়েছে।
পাউবো সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদী থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া–২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ২০১২ সালের দিকে জমি অধিগ্রহণের সময় নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল হতে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) ২ কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যায়ে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের সঙ্গেই পরবর্তী সময়ে নদী শাসনের বাঁধ সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।
গত বছর নভেম্বর মাসে নাওডোবার জিরো পয়েন্ট এলাকায় ওই বাঁধের ১০০ মিটার অংশ নদীতে ধসে যায়। এরপর মাঝিরঘাট এলাকায় আরও ১০০ মিটার অংশর বাঁধের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। এ ছাড়া বাঁধের বাকি অংশের কাছে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতুর জাজিরা প্রান্তের নদী শাসন যেখানে শেষ হয়েছে, সেখান থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধটি নাওডোবার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত দূরত্ব ২ কিলোমিটার। ওই বাঁধটির পাশে মহর আলী মাদবরবান্দি, আলম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি ও কালাই মোড়লকান্দি গ্রাম অবস্থিত। এ ছাড়া মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর বাজার রয়েছে। বাঁধের পাশ দিয়ে নাওডোবা-পালেরচর সড়ক রয়েছে। ওই সড়ক দিয়ে জাজিরার নাওডোবা, পালেরচর, বড়কান্দি, জাজিরা ও বিলাশপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন।
মহর আলী মাদবরকান্দি গ্রামের বাদশা মাদবরের পরিবারের ২৫ বিঘা ফসলি জমি ছিল। ২০১২ সালের পদ্মার ভাঙনে তা বিলীন হয়ে গেছে। এখন সর্বশেষ বসতবাড়িটি পদ্মার তীরে বাঁধের কাছে। তা–ও ভাঙনের আশঙ্কা করছেন বাদশা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পরিবার সচ্ছল কৃষক পরিবার ছিল। এখন আর আমাদের কোনো ফসলি জমি নেই। সব পদ্মা নদীতে গ্রাস করেছে। বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা আতঙ্কে আছি শেষ সম্বল বসতবাড়িটি কখন বিলীন হয়ে যায়।’
বাঁধটি মজবুতকরণ করার জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বাঁধটি মজবুতকরণ করা না হলে ভাঙনের ঝুঁকি রয়েছে।তারেক হাসান, শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী
দ্রত বাঁধটি সংস্কার না করা হলে এলাকার সঙ্গে সঙ্গে পদ্মা সেতুর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করেন পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধ নির্মাণের পর আর এ তীরে ভাঙন হয়নি। মানুষ স্বস্তিতে বসবাস করেছেন। বাজারে ব্যবসা করছেন। এখন বাঁধটি ভাঙনের মুখে পড়েছে। মানুষের মনে আতঙ্ক ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধটি সেতু বিভাগ নির্মাণ করেছিল ১২-১৩ বছর আগে। ওই বাঁধে সমীক্ষা চালানো হয়েছে, তাতে বাঁধটি এই মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত হয়েছে। বাঁধটি মজবুতকরণ করার জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বাঁধটি মজবুতকরণ করা না হলে ভাঙনের ঝুঁকি রয়েছে।‘