১০ বছর আগে হারিয়ে ফেলা মা–বাবাকে সান্তাহারে খুঁজে বেড়াচ্ছে ছেলেটি

সান্তাহারে এসে কিশোর রহিম হোসেন তার মা–বাবাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

১০ বছর আগে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় মা–বাবার কাছ থেকে হারিয়ে যায় রহিম হোসেন জুনাইদ নামের পাঁচ বছরের এক শিশু। মা–বাবাকে খুঁজে না পাওয়ায় তার ঠাঁই মেলে নারায়ণগঞ্জের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে।

বর্তমানে রহিমের বয়স প্রায় ১৫ বছর। ছোটবেলার স্মৃতি মনে করে দীর্ঘ ১০ বছর পর রহিম তাঁর মা–বাবাকে খুঁজতে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার রেলজংশন শহর সান্তাহারে এসেছে।

রহিম হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১২ সালে তাঁর বড় ভাই ইব্রাহিমকে বিদেশে পাঠানোর উদ্দেশে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মা–বাবার সঙ্গে আসে সে। বড় ভাইকে বিমানবন্দরে বিদায় দেওয়ার সময় অসাবধানতাবশত সে (রহিম) তার মা–বাবাকে হারিয়ে ফেলে। ওই এলাকায় কান্না করতে দেখে স্থানীয় ব্যক্তিরা তাকে উদ্ধার করে এক পুলিশ কর্মকর্তার কাছে তুলে দেন। সেই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে নারায়ণগঞ্জের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানেই কেটে যায় এক দশক। এরপর আশ্রয়কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী, খোঁজাখুঁজি করেও তার পরিবারের সন্ধান পায়নি।

ওই এলাকায় কান্না করতে দেখে স্থানীয় ব্যক্তিরা তাকে উদ্ধার করে এক পুলিশ কর্মকর্তার কাছে তুলে দেন। সেই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে নারায়ণগঞ্জের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানেই কেটে যায় এক দশক।

রহিম হোসেন জানায়, ১৮ জুলাই সে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে পালিয়ে কেরানীগঞ্জের বাবুবাজার সেতু পার হয়ে জিনজিরা রসুলপুর মসজিদ ঘাটসংলগ্ন রাস্তার পাশে আশ্রয় নেয়। সেখানে কিছু যুবক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার পরিচয় ও বাড়ি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নে বলে জানতে পারে।

রহিম হোসেনের বাবার নাম জাকির ব্যাপারী ও মা বিবি রহিমা। রহিমের বাবা একজন ফলের ব্যবসায়ী। এমন তথ্য দিয়ে কেরানীগঞ্জের যুবক নাজমুল ইসলাম তাঁর ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেই সঙ্গে মুঠোফোনে সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাহিদ সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চেয়ারম্যান রহিমকে সান্তাহারে পাঠাতে বলেন। এরপর রহিমকে সান্তাহারে পাঠানো হয়। রহিম মা–বাবাকে ফিরে পাওয়ার আশায় এখন সান্তাহার এলাকায় খোঁজাখুঁজি করছে।

নাজমুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আমরা একটি ছেলেকে বসে থাকতে দেখি। তাকে দেখে সন্দেহজনক মনে হলে জিজ্ঞাসাবাদে তার পরিচয় ও ঠিকানা জানতে পারি। পরে বগুড়ার সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাহিদ সুলতানা ও স্থানীয় সাংবাদিক নেহাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে সান্তাহারে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।’

সান্তাহার ইউপি চেয়ারম্যান নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘কেরানীগঞ্জ থেকে আমাকে এক যুবক ফোন করে বলেছিল, রহিম হোসেন নামের একটি ছেলেকে সেখানে পাওয়া গেছে, যার বাড়ি সান্তাহারে। ১০ বছর আগে ছেলেটি নাকি ঢাকায় মা–বাবার কাছ থেকে হারিয়ে যায়। তাঁরা ছেলেটিকে সান্তাহারে পাঠাতে চাইলে আমি তাঁদের পাঠাতে বলি এবং পুলিশের সহযোগিতা গ্রহণ করি, যাতে ছেলেটি পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারে। বর্তমানে ছেলেটি আমার হেফাজতে আছে।’