মায়ের পিঠ যেন ছেলের বিছানা

পিঠে শিশু সন্তান বেঁধে গাছের পাতা সংগ্রহ করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার ঘুঘুডারা গ্রামের চন্দনা রানী রায়। ছবিটি সোমবার তোলা
ছবি: প্রথম আলো

পাকা সড়কের পাশে গাছগাছালির সারি। মৃদু বাতাসে ঝরে পড়ছে গাছের পাতা। আর তা কুড়িয়ে বস্তায় ভরছেন চন্দনা। তাঁর পিঠে শাড়ির আঁচল দিয়ে বাঁধা একটি শিশু। চন্দনার দুই ছেলে। বড় ছেলের নাম অভিজিৎ (৫) আর ছোটটি পুলক (২)। বাড়িতে তাদের দেখভালের কেউ নেই। সংসারের প্রয়োজনে দুই ছেলেকে নিয়ে তাঁকে এদিক-সেদিক ছুটতে হয়। তখন ছোট ছেলেকে পিঠে তুলে শাড়ির আঁচল দিয়ে বেঁধে নেন চন্দনা। সেখানে থেকেই খেলে, আবার কখনো ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে পুলক।

চন্দনা রানী রায়ের (২৬) বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার ঘুঘুডারা গ্রামে। গতকাল সোমবার দুপুরে বালিয়াডাঙ্গী-রানীশংকৈল আঞ্চলিক সড়কের পাশে পিঠে শিশুসন্তানকে বেঁধে গাছের শুকনো পাতা সংগ্রহ করতে দেখা যায় তাঁকে। আলাপে আলাপে তিনি বলেন, তাঁর স্বামী ধনেশ রায় কৃষিশ্রমিক। দুই ছেলে নিয়ে তাঁদের সংসার। সকালে কাজে বের হয়ে যান ধনেশ। চন্দনা কখনো কখনো বের হন জ্বালানি সংগ্রহে। সে সময় ফাঁকা বাড়িতে ছেলেদের রেখে আসার সাহসটুকু হয় না তাঁর। যেখানেই যান, দুই ছেলে নিয়ে যান।

চন্দনা বলেন, অভিজিৎকে সামলানো গেলেও কিছুতেই মায়ের পিছু ছাড়তে চায় না পুলক। একসময় তাকে পিঠে বেঁধে নেন তিনি। পিঠে তুলে নিলেই ছেলের বিরক্ত করা থেকে যায়। এরপর ছেলেকে পিঠে নিয়েই নিজের কাজ সেরে নেন তিনি। বললেন, স্বামীর একার আয়ে চলে না বলে তাঁকেও মাঠে কাজ করতে হয়। যখন হাতে কাজ থাকে না, তখন তিনি সড়কের পাশের গাছ থেকে ঝরে পড়া শুকনো পাতা সংগ্রহ করেন। পরে তা রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন। এতে তাদের কিছুটা সাশ্রয় হয়।

প্রতিবেশী ‍সুনেত্রা রানী (৩৩) বলেন, ‘চন্দনাক ছাড়া ছুয়াটা কিছুই বুঝিবা চায় না। আর চন্দনাও ওক সব সময়েরতানে আগলে রাখেছে।’