সোহরাব হোসেন

পেশায় কেব্‌ল নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ী। কিন্তু এলাকায় কারও বাড়িতে সাপ–বেজি দেখা গেলেই ডাক পড়ে তাঁর। দিন বা রাতের যেকোনো সময়ে একটা ফোন পেলেই ছুটে যান সোহরাব হোসেন (৪২)। বন্য প্রাণীটিকে সযত্নে উদ্ধার করে ছেড়ে দেন স্থানীয় জঙ্গলে। এ কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেন না তিনি। সোহরাবের কাজের কারণে এলাকাবাসীও সচেতন হয়েছেন। বন্য প্রাণী দেখা গেলে তাঁরা আর মারতে উদ্যত হন না। উদ্ধারকারীকে খবর দেন।

ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন চার বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্য প্রাণী উদ্ধারের কাজ করে আসছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই শখের বশে ও বন্য প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা থেকে এ কাজ শুরু করেন তিনি। সাপের প্রজাতি, বৈশিষ্ট্য, বিভিন্ন বন্য প্রাণীর স্বভাব সম্পর্কে বেশ ভালো জ্ঞানও রাখেন তিনি। ইউটিউব ও ডিসকভারি চ্যানেল দেখে এসব জ্ঞান অর্জন করেছেন বলে জানালেন সোহরাব।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সোনাগাজী উপজেলার সাতবাড়িয়া এলাকার গোপাল চন্দ্র দাসের ঘর থেকে একটি বিষধর শঙ্খিনী সাপ উদ্ধার করেন সোহরাব। গোপাল চন্দ্র দাসের ভাই মোহন চন্দ্র দাস বলেন, প্রায় ৬ ফুট দৈর্ঘ্যের সাপ দেখে ভয় পান তাঁরা। স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে সোহরাবের কথা শুনেছিলেন। তাৎক্ষণিক তাঁকে ফোন দিয়ে সাপের কথা জানান। ফোন পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সোহরাব হোসেন পৌর শহর থেকে মোটরসাইকেলে করে তাঁর বাড়িতে এসে সাপ উদ্ধার করেন। এর আগেও এই এলাকা থেকে সোহরাব কয়েকটি বিষধর সাপ উদ্ধার করেছেন। বন বিভাগের লোকজনের নম্বর না থাকায় সোহরাবকে ফোন দেন তিনি। যেকোনো সময় তাঁকে ডাকলে দ্রুত সাড়া পাওয়া যায়।

সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কোথাও বাসাবাড়িতে ও লোকালয়ে সাপ, কচ্ছপ, বেজি ও গুইসাপসহ যেকোনো বন্য প্রাণী দেখলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে ফোন করে জানান। পরে তিনি গিয়ে প্রাণীটিকে ধরে বনে-জঙ্গলে নিরাপদে ছেড়ে দিয়ে আসেন। গতকাল বিকেলে উদ্ধার করা শঙ্খিনী সাপটির ওজন প্রায় দুই কেজি ছিল। পরে তিনি লোকজন নিয়ে সাপটি উদ্ধার করে জঙ্গলে ছেড়ে দেন।

গত চার বছরে অন্তত ৫০-৬০টি সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী উদ্ধার করে বনে-জঙ্গলে অবমুক্ত করেছেন সোহরাব। তিনি বলেন, ‘আগে মানুষের বাসায় সাপ বা বেজি মারার জন্য আলাদা লাঠি রাখা হতো। কোনো বন্য প্রাণী দেখা গেলেই সবাই মিলে মারতে উদ্যত হতেন। এখন মানুষ সচেতন হয়েছেন।

আমাকে বা বন বিভাগের নম্বরে ফোন করে খবর দেন। আঘাত বা ভয় না পেলে কোনো প্রাণী মানুষকে আক্রমণ করে না। তাই বন্য প্রাণীকে না মেরে নিরাপদে চলে যাওয়ার জন্য সুযোগ দেওয়া উচিত।’

উদ্ধার করা শঙ্খিনী সাপের বিষয়ে সোহরাব বলেন, গায়ে কালোর মধ্যে হলুদ ডোরাকাটার কারণে সহজেই সাপটি চেনা যায়। এরা সাধারণত ইঁদুরের গর্ত, ইটের স্তূপ এবং উইয়ের ঢিবিতে থাকে। এ সাপ যে এলাকায় থাকে, সেখানে অন্য জাতের সাপ সাধারণত থাকে না। কারণ, এরা কেউটে, গোখরা, চন্দ্রবোড়া জাতের সাপ খেয়ে ফেলে। আইইউসিএনের তালিকায় সাপটিকে বাংলাদেশে বিপন্ন ঘোষণা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা সামাজিক বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোহরাব অনেক দিন ধরে এলাকায় বন্য প্রাণী উদ্ধারের কাজ করছেন। তাঁকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের কাজের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। লোকালয়ে যেকোনো বন্য প্রাণী দেখা গেলে না মেরে উদ্ধারকারীদের খবর দিতে বলা হয়েছে লোকজনকে। ইতিপূর্বে বন বিভাগ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হরিণ, বাঘ, বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী উদ্ধার করে ইকোপার্কসহ বনে-জঙ্গলে অবমুক্ত করা হয়েছে।’