কুমিল্লায় মাদ্রাসার পরীক্ষায় বই দেখে লিখছেন শিক্ষার্থীরা, ফেসবুকে ছড়িয়েছে ভিডিও

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পিপুলিয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসায় পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা বই খুলে উত্তরপত্রে লিখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছেছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার একটি মাদ্রাসায় ফাজিল স্নাতক (অনার্স) পরীক্ষায় প্রকাশ্যে বই খুলে উত্তরপত্রে লেখার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।  

উপজেলার পিপুলিয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসায় পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা বই খুলে উত্তরপত্রে লিখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার ওই ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এ সম্পর্কে ইউএনও সুজন চন্দ্র রায় বলেন, এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁদের আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২ মিনিট ২৭ সেকেন্ড ও দেড় মিনিটের দুটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কক্ষে পরীক্ষা চলছে। প্রায় প্রতিটি টেবিলের ওপর পরীক্ষার্থীদের সামনে বই আছে। সেই বই দেখে দেখে উত্তরপত্রে লিখছেন পরীক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিপুলিয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার ফাজিল স্নাতক (অনার্স) প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা চলছে। গত রোববার প্রথম ও তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যে কক্ষের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে ৪৪ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। তাঁরা সবাই ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। নিজ মাদ্রাসায় পরীক্ষাকেন্দ্র হওয়ায় শিক্ষকেরা বই খুলে পরীক্ষার উত্তরপত্রে লেখার সুযোগ করে দিয়েছেন বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ রয়েছে। মাদ্রাসাটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল কুদ্দুস বিরুদ্ধে পরীক্ষায় অসদুপায়ের সুযোগ করে দেওয়া কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল কুদ্দুস। গতকাল রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিডিওটি আমাদের প্রতিষ্ঠানের। তবে এটি কোনো পরীক্ষার কি না, সেটি নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। কে বা কারা ভিডিওটি ছড়িয়েছে, আমি কিছুই জানি না। আমার কাছে মনে হয় এটা শিক্ষার্থীদের কোনো অ্যাসাইনমেন্ট করার ভিডিও হতে পারে।’  

আবদুল কুদ্দুস আরও বলেন, ‘আমি কোনো পরীক্ষার্থীকে টাকার বিনিময়ে এভাবে বই দেখে লেখার সুযোগ করে দিয়েছি, বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারাই ভিডিওটি ছড়িয়ে আমাদের মাদ্রাসাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।’

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ মো. তৈয়ব হোসেন বলেন, ‘অসদুপায়ে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’