সোতি জালে বাধাগ্রস্ত পেঁয়াজের আবাদ

জমিতে ধান কাটতে দেরি হচ্ছে। ফলে সেখানে পেঁয়াজসহ অন্য রবিশস্যের আবাদ করতে পারছেন না।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাগেশ্বরী নিষ্কাশন খালে বসানো হয়েছে অবৈধ সোতিজালের ঘের। গত বৃহস্পতিবার শামুকজানি গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রধান নিষ্কাশন খালের অন্তত পাঁচটি জায়গায় বাঁশের ঘের তৈরি করে সোতি জাল দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় উপজেলার অন্তত ১৫টি বিলের প্রায় ১০ হাজার বিঘা আমনের খেত জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। এসব জমিতে ধান কাটতে দেরি হচ্ছে। ফলে সেখানে পেঁয়াজসহ অন্য রবিশস্যের আবাদ করতে পারছেন না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, কাগেশ্বরী নদীকে ১৯৯২ সালে প্রধান নিষ্কাশন খালে (ডি-২) রূপান্তরিত করা হয়। এই নদীর সঙ্গে সংযোগ রয়েছে উপজেলার অন্তত ১৫টি বিলের। বর্ষা মৌসুমে এসব বিলসহ উপজেলার নিচু এলাকার পানি ওই খালের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। এসব খালে আমন ধান কেটে পেঁয়াজসহ রবিশস্যের আবাদ করা হয়।

 কৃষকেরা জানান, প্রতিবছর অক্টোবরের মাঝামাঝি জমি থেকে পানি নেমে যায়। কিন্তু এ বছর উপজেলার নন্দনপুর, গৌরীগ্রাম, করমজা, কাশীনাথপুর ও ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের ২৫টির বেশি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার বিঘা আমন খেতে এখনো এক থেকে পাঁচ ফুট পানি জমে আছে।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, প্রধান নিষ্কাশন খালের শামুকজানি ও বড়গ্রামের পাঁচটি জায়গায় বাঁশ, পলিথিন ও চাটাই দিয়ে বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে। সেই বেড়ার সঙ্গে সোতি জাল স্থাপন করে অবাধে পোনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকারের মাছ ধরা হচ্ছে। বেড়ার কারণে পানিনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

উপজেলার সাতানিরচর গ্রামের কৃষক আবদুল কদ্দুস বলেন, ‘পেঁয়াজ আবাদের সময় পার হয়া যাতেছে। কিন্তু জমিতে পানি থাকায় আমাগরে গ্রামের কেউই তা আবাদ করব্যার পারতেছি না। তা ছাড়া জমির আমন ধান পাকার পরে তা-ও কাটব্যার পারতেছি না।’

এলাকার কৃষকেরা জানান, সোতি জালের ঘের নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা স্থানীয় প্রভাবশালী। ফলে ভয়ে তাঁরা ঘেরমালিকদের কিছু বলতে পারছেন না। প্রশাসনের উদ্যোগে ঘেরগুলো উচ্ছেদ করার দাবি জানান তাঁরা।

শামুকজানি ও বড়গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, নিষ্কাশন খালের আড়াআড়ি জুড়ে বাঁশ, পলিথিন, চাটাই ও সূক্ষ্ম জালের সাহায্যে বেড়া দিয়ে সোতি জালের ঘের বোনানো হয়েছে। পানিপ্রবাহের জন্য মাত্র কয়েক ফুট জায়গা রাখায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানিনিষ্কাশন।

বড়গ্রাম এলাকায় সোতি জালের ঘের নির্মাণ করেছেন সোবাহান আলী। তিনি বলেন, বর্ষা শেষে বিলের পানি বের হওয়ার সময় এই এলাকায় বছরের পর বছর ধরে সোতি জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। সেই হিসাবে অন্যদের মতো তিনিও সোতি জাল বসিয়েছেন। আর সোতি জালের কারণে বিলের পানি বের হতে সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, ‘কৃষকদের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সোতি জালের কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে আমন ধান কাটতে ও পেঁয়াজের আবাদ করতে দেরি হবে।’

পাউবোর বেড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘কৃষকদের জন্য ক্ষতিকর কোনো কিছুই মানা হবে না। এ ব্যাপারে সরেজমিন দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন বলেন, ‘সোতি জালের ঘেরগুলো উচ্ছেদের জন্য ইতিমধ্যে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। ঘেরগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। এগুলোর মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। নিষ্কাশন খালে একটি ঘেরও রাখা হবে না।’