মাছ চুরির অভিযোগে শ্রমিক দলের দুই নেতাকে গাছে বেঁধে পিটুনি, বিপাকে যুবদল কর্মী

রাজশাহীতে মাছ চুরির অভিযোগে শ্রমিক দলের দুই নেতাকে মারধরের পর নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে যুবদল কর্মী মানিক ইসলামের সংবাদ সম্মেলন। আজ রোববার সকালে রাজশাহী প্রেসক্লাবেছবি: প্রথম আলো।

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় ‘মাছ চুরির অভিযোগে’ শ্রমিক দলের দুই নেতাকে গাছে বেঁধে মারধর করা হয়েছে। এরপর পুকুরের মালিক যুবদল কর্মী নিজেই বিপাকে পড়েছেন। তাই নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে আজ রোববার সকালে রাজশাহী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি।

এই পুকুরমালিকের নাম মানিক ইসলাম। ঘটনার পর তাঁর ওপর হামলার চেষ্টা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তিনি।

মানিক ইসলামের বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার সাইবার গ্রামে। তিনি দুর্গাপুর পৌর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম ও সদস্যসচিব মো. রিপনের বিরুদ্ধে তাঁর পুকুর থেকে মাছ চুরির অভিযোগ তুলেছেন। মানিকের বাড়ির সামনে এ দুই নেতাকে ছাগলের রশি দিয়ে গাছে বেঁধে মারধরের ঘটনা ঘটে গত বৃহস্পতিবার সকালে। এর আগে তাঁদের পুকুরপাড় থেকে ধরা হয়। মানিক তাঁর পুকুর থেকে প্রায় ছয় লাখ টাকার মাছ চুরির অভিযোগ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মানিক বলেন, তিনি সাইবার গ্রামের আলিমুদ্দিন নামের এক ব্যক্তির ৭৮ শতাংশ পুকুর তিন বছরের জন্য ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছেন। এর মধ্যে এক বছর পার হয়েছে। সম্প্রতি শ্রমিক দল নেতা আবুল কালাম ও রিপন তাঁকে ডেকে বলেন, তাঁরা প্রদীপ বাবু নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে পুকুরটি কিনে নিয়েছেন। তাঁকে পুকুরটি ছেড়ে দিতে হবে। পরে ১২ জন ব্যক্তির উপস্থিতিতে তাঁরা সমাধানের জন্য বসেন। সেখানে মানিক জানান, আবুল কালাম ও রিপন যদি পুকুর কেনার বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেন তাহলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তিনি তাঁর মাছ তুলে নিয়ে পুকুর ছেড়ে দেবেন। কালাম কাগজ দেখাতে সময় চান। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোররাতে জেলেদের নিয়ে রিপন ও কালাম পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরতে থাকেন। মাছ ধরে বস্তায় ভরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

মানিক বলেন, সকালে তাঁর বাবা কালাম মোল্লা ও মামা মাইনুল ইসলাম পুকুরে গিয়ে দেখেন, পুকুরে জাল দিয়ে শেষ টান দেওয়ার আগে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে মাছ লাফালাফি করছে। পুকুরের দক্ষিণ দিকে তাঁরা দেখেন, রিপন ও কালাম জেলেদের নিয়ে মাছ ধরছেন। তাঁদের দেখে অন্যরা পালিয়ে যান। তবে কালাম ও মাইনুল শ্রমিক দলের দুই নেতাকে ধরে ফেলেন। খবর পেয়ে মানিক সেখানে গিয়ে দুজনকে তাঁদের বাড়ির সামনে নিয়ে যান।

মানিক বলেন, ‘এ সময় অনেক উত্তেজিত লোকজন জড়ো হয়ে যায়। আমি বাধা দেওয়া সত্ত্বেও গ্রামের কিছু যুবক বাড়ির সামনে ছাগল বেঁধে রাখা দড়ি খুলে দুজনকে গাছের সঙ্গে বাঁধেন। এ সময় দু–একজন একটু মারধরও করেন। পরে তাঁদের প্রাণে বাঁচাতে আমি বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাই এবং পানি ও বিস্কুট খেতে দিই। কারণ, কালাম সম্পর্কে আমার মামার চাচাশ্বশুরও।’

মানিক জানান, এ ঘটনার পর দলীয় নেতা-কর্মীরা আসেন। তখন তিনি ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। পরে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন, ২১ অক্টোবর তাঁরা সবাই বসবেন। এরই মধ্যে কালামের ছেলে সোয়াদ এসে বলতে থাকেন, তাঁর বাবাকে নাকি রাস্তা থেকে তুলে আনা হয়েছে। তিনি মামলা করার হুমকি দিয়ে চলে যান। পরে সোয়াদ থানায় যান। এ সময় দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুল ইসলাম তাঁকে ফোন করে দুজনকে ছেড়ে দিতে বলেন। পরে দুই নেতাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মানিক অভিযোগ করেন, এ ঘটনার জের ধরে পরদিন সন্ধ্যায় কাঁঠালবাড়িয়া এলাকায় সোয়াদ ও তাঁর সহযোগী করিম ও সজিব রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁর (মানিক) ওপর হামলার চেষ্টা করেন। তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে আঘাতের চেষ্টা করলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এখন ভয়ে তাঁর পরিবারের কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। তাঁর চাচা মো. আসাদুল উপজেলা সদরে দলিল লেখকের কাজ করেন। রোববার সকালে তাঁকে সেখান থেকে বের করে দিয়েছেন কালাম ও রিপনের লোকজন। ঘটনার পর তাঁর সঙ্গে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাহিদুল হক দোকানে বসে চা পান করেছিলেন। তাই রোববার সকালে তাঁকেও উপজেলা সদরে মারধর করা হয়েছে। এখন তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। তিনি নিজের নিরাপত্তা এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিক দল নেতা আবুল কালাম বলেন, ‘পুকুরটা আমি কিনে নিয়েছি। কাগজপত্র আছে। পুকুর ছেড়ে দিতে বললে মানিক পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। বৃহস্পতিবার সকালে আমি ও রিপন পুকুর দেখতে গিয়েছিলাম। তখন আমাদের ধরে মানিক তার বাড়ির সামনে নিয়ে যায় এবং গাছে বেঁধে মারধর করে। আমরা মাছ চুরি করতে যাইনি। পুকুর থেকে কোনো মাছও ধরা হয়নি। মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।’

এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানার ওসি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটা আমরা শুনেছি। কিন্তু কোনো পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে আমরা সেটা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।’