বাজিতপুর উপজেলা নির্বাচনে হেরে এমপিকে দুষলেন আওয়ামী লীগের ৩ জন

উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের বিশ্বাস, বড় জয় পেতে রেজাউলের যতটা কৃতিত্ব, তার চেয়ে বেশি অবদান সংসদ সদস্যের।

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চার চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রত্যেকে ছিলেন আওয়ামী লীগের পদ–পরিচয়ধারী। প্রদত্ত ৫২ হাজার ৮০৬ ভোটের মধ্যে একাই ৩৬ হাজার ২১২ ভোট পেয়ে জয় পেয়েছেন আনারস প্রতীকের রেজাউল হক। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। প্রথমবারের মতো নির্বাচন করে বড় জয় পেলেন তিনি। অপর তিনজন তাঁর সঙ্গে সামান্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি। এমনকি হারালেন জামানতও। এ জন্য তাঁরা দুষছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) আফজাল হোসেনকে।

তুলনামূলক নবীন প্রার্থী রেজাউল হকের বিপক্ষে হেভিওয়েট তিন প্রতিদ্বন্দ্বীর লজ্জাকর এমন হারের কারণ এখন মাঠপর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের বিশ্বাস, বড় জয় পেতে রেজাউলের যতটা কৃতিত্ব, তার চেয়ে অনেক বেশি অবদান সংসদ সদস্যের। চার চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে কেবল রেজাউল সংসদ সদস্যের মন পেয়েছিলেন। বিজয়ী প্রার্থীও তাই বিশ্বাস করছেন। রেজাউল হক বলেন, ‘সবই তাঁর (সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন) ইচ্ছার ফল। আমি তাঁর মন পেয়েছি। তিনি মন থেকে চেয়েছেন বলে আমার বড় জয় এসেছে।’

জামানত হারানো অপর তিন প্রার্থী হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাকিবুল হাসান। মোটরসাইকেল প্রতীকে নির্বাচন করে তাঁর ভোট ৭ হাজার ৪৭৭। বিজয়ী প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর ভোট ব্যবধান ২৮ হাজার ৭৩৫। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন ভোট পান ৬ হাজার ৮৭৩টি। তাঁর প্রতীক দোয়াত-কলম। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন ঘোড়া প্রতীকে ভোট পান ২ হাজার ২৪৪।

বাজিতপুর ও নিকলী উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ-৫। এই আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিবারই তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। আফজাল বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

এবার উপজেলা নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর আফজাল এলাকায় আসেননি। এমনকি নিজের ভোটও দেননি। তারপরও উপজেলা নির্বাচনের ভোটের আগে ও পরে তিনি আছেন মূল আলোচনায়। সব জায়গায় প্রচার পায় রেজাউল আফজালের পছন্দের প্রার্থী। এমন বিশ্বাস থেকে সংসদ সদস্যের অনুগত ব্যক্তিরা রেজাউলের পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আর জয়–পরাজয়ের ব্যবধানের ভিত্তি গড়ে ওঠে এখান থেকেই।

রেজাউল হক হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আলাউল হকের ছেলে। আলাউল হক দীর্ঘদিন সংসদ সদস্যবিরোধী মঞ্চে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তবে কয়েক বছর ধরে বিরোধী মঞ্চ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনেন তিনি। এই অবস্থায় রেজাউল হকের পক্ষে সংসদ সদস্যের সমর্থনকে রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।

এবার জামানত হারানোর একমাত্র কারণ মনে করছেন আফজালের ইশারাকে। তিনি এই ইশারাকে দৈত্যের কালো হাতের সঙ্গে তুলনা করেন। মোবারক হোসেন বলেন, ‘রেজাউলের হয়ে কাজ করতে গিয়ে এমপি আমার ভোটারদের ভয় দেখিয়ে কেন্দ্রবিমুখ করেছেন। তা না হলে, এমন ফল হওয়ার কথা নয়।’

আবদুল্লাহ আল মামুন দীর্ঘদিন ধরে আফজালের অনুগত থেকে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘এমপির হয়ে কাজ করেছি। দল করেছি। অথচ ভোটে তাঁর মন পেলাম না, এটা কষ্টের।’ একই ভাষ্য রাকিবুল হাসানেরও।

জামানত হারানো তিন প্রার্থীর অভিযোগ প্রসঙ্গে গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কথা হয় সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের সঙ্গে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়–পরাজয়ের বড় ব্যবধানে ভূমিকা আছে কি না, জানতে চাইলে আফজাল কিছুক্ষণ হাসেন। পরে বলেন, ‘সরাসরি নেই। চারজনই আওয়ামী লীগের। সবাইকে আমি পছন্দ করি। তবে হয়তো রেজাউলকে একটু বেশি পছন্দ।’