চমেক হাসপাতাল
ওয়ার্ডবয়দের সঙ্গে চালকদের যোগসাজশে বাড়ছে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া: অভিযোগ চট্টগ্রাম সিটির মেয়রের
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়দের সঙ্গে চালকদের যোগসাজশের কারণে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বেড়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন। এতে রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এই অভিযোগ করেন।
চমেক হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া পুনর্মূল্যায়ন নিয়ে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন। সভায় পুলিশ, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ২০১৮ সালের বিদ্যমান ভাড়ার তালিকার ওপর ১০ শতাংশ হারে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। ছয় মাসের জন্য নতুন এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। তবে ১০ শতাংশ হারে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে আপত্তি জানায় মালিক সমিতি। তাঁরা ভাড়া ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র শাহাদত হোসেন বলেন, এটা (অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া) এখনকার সমস্যা নয়, দীর্ঘদিনের সমস্যা। যাঁরা অ্যাম্বুলেন্স চালান, তাঁদের সঙ্গে ওয়ার্ডবয়দের যোগাযোগ আছে। যখন কোনো রোগী মারা যান, তখন ওয়ার্ডবয় তৎপর হয়ে যান। ওয়ার্ডবয়রা একটা ভাগ পান। যার কারণে ভাড়া বেড়ে যায়। একদম মোদ্দাকথা হলো সেটা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পরিচালকের উচিত শুধু ওয়ার্ডবয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়ে একদিন সভা করা। ওই সভায় ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদেরও রাখার কথা বলেন তিনি।
২০১৮ সালে ৫ স্তরে দূরত্ব ও গাড়ি ভেদে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার ওপর ভিত্তি করেই ভাড়া সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন মেয়র। পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্সের ফিটনেস প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন তিনি।
মেয়র বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স ফিট আছে কি না, সেটা আগে দেখতে হবে। যেসব গাড়ি ফিটনেস নেই, সেগুলো রাস্তায় চলাচলের উপযোগী করতে হবে। যাঁদের অ্যাম্বুলেন্সের ফিটনেস আছে, তারাই চালাতে পারবেন। আজ থেকে অভিযান হবে। কোনো ধরনের শোষণ-নির্যাতন, রোগীকে নিয়ে টালবাহানা চলবে না। স্পষ্ট বলে দিতে চাই, আমাদের মানবিক হতে হবে রোগীদের প্রতি।’ এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অন্যায় ও রোগীদের ওপর জবরদস্তি সহ্য করা হবে না বলে মেয়র মন্তব্য করেন।
চিকিৎসা সামগ্রীর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ফার্মেসি মালিকদের সঙ্গে বৈঠকেরও তাগিদ দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এখন করোনার সময় দেখবেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভসের দাম বাড়িয়ে দেবে তারা।’
সভা সম্পর্কে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দীন বলেন, ২০১৮ সালের ভাড়া থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে অ্যাম্বুলেন্সের নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নিচ্ছে কি না, তা ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষণ করবেন।
সভায় উপস্থিত অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইউসুফ ও সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। আমান উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম ৫০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করে তালিকা প্রস্তুতের জন্য। এবং তালিকাটি ৩ মাসের জন্য করতে বলেছিলাম। কিন্তু তাঁরা তা ছয় মাসের জন্য করেছেন। আমরা স্বাক্ষর করেছি ঠিক। কিন্তু কীভাবে ভাড়া নিয়ে যাব, বুঝতে পারছি না। কারণ, এখন গাড়ির কর, আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে।’