পদ্মায় ভাসছিল মাথাবিহীন মরদেহ, নিখোঁজ যুবকের পরিবারের আহাজারি
পদ্মা নদীতে ভাসছিল মাথাবিহীন তরুণের লাশ। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চর বরাট পদ্মা নদীর শাখা ক্যানালে লাশটি ছিল। দুপুর ১২টার দিকে দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ এবং গোয়ালন্দ ঘাট থানা–পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। সুরতহাল শেষে বেলা একটার দিকে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
লাশটি জিহাদ সরদার (২৯) নামের এক যুবকের বলে দাবি তাঁর পরিবারের সদস্যদের। জিহাদ দুই দিন ধরে নিখোঁজ। তিনি গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউপির কাসরন্দ গ্রামের সহিদ সরদারের ছেলে। ঢাকার একটি জাহাজ মেরামত কারখানায় শ্রমিকের কাজ করা জিহাদ গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ি ফেরেন। ওই দিন রাতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তিনি নিখোঁজ হন। পরদিন গোয়ালন্দ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তাঁর পরিবারের লোকজন।
আজ সকালে স্থানীয় কৃষকেরা পদ্মা নদীতে মাথাবিহীন একটি লাশ দেখতে পান। নদীতে মরদেহ ভাসছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে জিহাদ সরদারের পরিবারের লোকজন নদীর পাড়ে এসে গায়ের পোশাক দেখে লাশটি জিহাদের বলে দাবি করেন। এই যুবকের বাবা, মা, দুই বোন, এক ভাই ছাড়াও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রয়েছেন।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পদ্মার পাড় চর বরাট এলাকায় দেখা যায়, নদীর পাড়ে নানা বয়সী উৎসুক মানুষের ভিড়। নদীর কিনার থেকে কয়েক গজ দূরে মাথাবিহীন লাশটি ভেসে আছে। স্বজনদের কান্নায় নদীর পাড়ের বাতাস ভারী হয়ে আসছে।
চর বরাট থেকে এক কিলোমিটার দূরে জিহাদদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বাক্রুদ্ধ হয়ে চেয়ারে বসে আছেন বাবা সহিদ সরদার। এ ছাড়া স্ত্রী মেঘনা খাতুন, মা ফরিদা বেগমসহ স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। মেঘনা খাতুন বলেন, তিনি প্রথম সন্তান প্রসব করবেন। ছেলে হবে জেনে জিহাদ অনেক খুশি ছিলেন। ১১ এপ্রিল বাড়ি থেকে ঢাকা যাওয়ার পর ফেরেননি জিহাদ। কয়েক দিন ধরে মেঘনা খাতুনের শরীর বেশি অসুস্থ হওয়ায় বৃহস্পতিবার শ্বাশুড়িকে নিয়ে রাজবাড়ীতে চিকিৎসক দেখাতে গিয়েছিলেন। রাতে বাড়ি ফিরে জানতে পারেন, জিহাদ এসেছেন।
মেঘনা খাতুন বলেন, ‘আমার সাথে তাঁর (জিহাদ সরদার) দেখা হয়নি। রাতে খাবার খেয়ে চাচাতো ভাই সোহাগের সঙ্গে বাইরে যান। রাত ১২টায়ও ফিরে না আসায় ফোন করলে জানান, জরুরি কাজে বাইরে আছেন, কিছুক্ষণ পর ফিরবেন। রাত দুইটার দিকে আবার ফোন করলে নরম সুরে জানান, একটু পর আসবেন। এরপরও ফেরেননি।’
জিহাদের মা ফরিদা বেগম বলেন, ‘আজ সকালে এলাকার লোকজন বলাবলি করছিল, নদীর পাড়ে একজনের গলাকাটা লাশ পইড়া আছে। আমি যাবার চাইলেও নেয়নি। পরে যাইয়া দেহি আবার ব্যাটার লাশ গাঙে ভাসতাছে। পরনের প্যান্ট আর জামা দেইখাই বুইঝা ফ্যালাইছি, এটা আমার ব্যাটার লাশ। এ ছাড়া হাত দুটি ডকে (কারখানায়) কাজ কইরা দাগ পইড়া গেছে। ওরা আমার ব্যাটারে কেন মাইরা ফ্যালাইছে?’ ফরিদা বেগম আরও বলেন, ‘আমার ছেলেকে ঢাকা থেকে ফোন করে আনা হয়েছে। অথচ শেষবারের মতো আমার ছেলের সঙ্গে দেখা হয়নি। বারবার ফোন করলেও না ধরায় বুঝেছিলাম বিপদে আছে। কিসের বিপদ, কারা ওকে নিয়েছিল, বুঝতে পারলাম না। চাচাতো ভাই সোহাগ সারাক্ষণ সঙ্গে ছিল। ওই সোহাগই জানে জিহাদের কী হয়েছিল?’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন বলেন, স্থানীয় কেউ কেউ দুই দিন আগে নিখোঁজ জিহাদের লাশ দাবি করছেন। লাশ উত্তোলনের পর এবং তাঁর মাথা খুঁজে পেলে নিশ্চিত না হয়ে জিহাদের লাশ কি না, বলা যাচ্ছে না।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, মাথাবিহীন লাশটি দুপুরে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে ফরিদপুর থেকে পিবিআইয়ের দল কাজ করছে। শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত জিহাদের লাশ কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।