খেলার বড় মাঠ চায় মেয়েরা

এখান থেকে বেড়ে ওঠা ১২ জনের বেশি মেয়ে বয়সভিত্তিক জাতীয় দল ও বিকেএসপিতে খেলছে।

ছোট মাঠটিতে অনুশীলন করে খুদে মেয়ে ফুটবলাররা। গত মঙ্গলবার মাগুরার গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

মাগুরায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবলে টানা সপ্তমবারের মতো জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েরা। গত মঙ্গলবার মাগুরা শহরের কালেক্টরেট চত্বরে ৯-০ গোলে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেয় তারা। তবে চ্যাম্পিয়ন দলের বিদ্যালয়ের মাঠটি ছোট। সেখানে অনুশীলন করে তারা সাফল্য পেয়েছে। খুদে এই খেলোয়াড়েরা বিদ্যালয়ে বড় মাঠ চায়।

শ্রীপুর উপজেলার গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাথি বিশ্বাস ও ইতি রানী মণ্ডল এবার নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন। এখান থেকে বেড়ে ওঠা ১২ জনের বেশি মেয়ে বয়সভিত্তিক জাতীয় দল ও বিকেএসপিতে (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) খেলছে। তাঁদের সবাই শুরু করেছে বিদ্যালয়ের ২০ শতকের ওপর ছোট একটা মাঠে অনুশীলন করে।

গোয়ালদহের মেয়েরা জেলা পর্যায়ের টুর্নামেন্টে একটা ম্যাচও হারেনি। মোট পাঁচ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ৩৭টি গোল দিয়েছেন তাঁরা। বিপরীতে তাঁদের একটি গোলও হজম করতে হয়নি।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০১২ সালের দিকে তাঁরা মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে কাজ শুরু করেন। বিদ্যালয়ের ছোট মাঠেই চলে অনুশীলন। ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত (২০২০-২১ সালে করোনার কারণে খেলা হয়নি) টানা সাতবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবলে জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েরা। এ ছাড়া একই টুর্নামেন্টে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়টি খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে রানারআপ হয়। এর পরের দুই বছর বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শ্রীপুর উপজেলার এই বিদ্যালয়ের মেয়েরা। এই বিদ্যালয়ে খেলা শুরু করা ১৪ জন ছাত্রী বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তাঁর মধ্যে ৮ জনসহ মোট ১০ জন এখন জাতীয় বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলছেন।

বিদ্যালয়ের মেয়েদের সাফল্যের পেছনে নেই কোনো পেশাদার কোচের ভূমিকা। এর পেছনের কারিগর গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাস রঞ্জন দেবজ্যোতি ও সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম। তাঁরাই স্কুল শেষে নিয়মিত অনুশীলন করান মেয়েদের। শিক্ষকদের আগ্রহ ও মেয়েদের সফলতার কারণে স্থানীয়রা এখন তাঁদের মেয়েদের ফুটবলার হিসেবে তৈরি করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন খুদে ফুটবলার ওই স্কুল চত্বরে অনুশীলন করে।

স্থানীয় অভিভাবকদের একজন ভরৎ চন্দ্র মণ্ডল মঙ্গলবার বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমরা সবাই তাঁদের জন্য গর্বিত। সাথি-ইতির মতো অনেকেই এখন ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এখানের মূল সমস্যা খেলার মাঠ হয়ে গেছে ছোট। এই সমস্যা সমাধানের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের।’

গত মঙ্গলবার দুপুরে গোয়ালদহ স্কুলে দিয়ে দেখা যায় মধ্যাহ্ন বিরতিতে ছেলেমেয়েরা দৌড়াদৌড়ি করছে। মাঠের দুপাশে স্কুলের ভবন, এক পাশে বসতবাড়ি আর এক পাশে বাঁশের ঝাড়। এর মাঝে ছোট্ট জায়গায় প্রতিদিন বিকেলে চলে অনুশীলন। আর টুর্নামেন্ট সামনে রেখে অনুশীলন হয় সকালেও।

মাগুরার ক্রীড়া সংগঠকদের একজন বারিক আনজাম বলেন, ‘মাঠ উন্নত না হলে খেলা কখনোই উন্নত হবে না। আমরা যে সাফে এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে বা আরও ভালো কিছু অর্জন করতে হলে সারা দেশের খেলার মাঠ উন্নত করতে হবে। কারণ, এই তৃণমূল থেকেই খেলোয়াড় তৈরি হয়। আমাদের গোয়ালদহের মেয়েরা একটা ভালো মাঠ পেলে ওরা আরও দুর্দান্ত ফলাফল এনে দেবে সন্দেহ নেই।’

গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাস রঞ্জন দেবজ্যোতি বলেন, ‘এলাকায় মেয়েদের ফুটবলের যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তাতে একটা মাঠের বিকল্প নেই। আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি। এ ছাড়া আমাদের মেয়েরা (জাতীয় দলে যাঁরা খেলেন) একটি আবেদন গত জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দিয়েছে।’