সবুজ বনে সাদা বকের ওড়াউড়ি

সবুজ বনে সাদা বকের দল। মঙ্গলবার বিকেলে খুলনার কয়রা উপজেলার পাথরখালী গ্রামের শাকবাড়িয়া নদী চরের বনেছবি: প্রথম আলো

খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর তীরের বাঁধ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ঘন সবুজ বন। গোলপাতা, কেওড়া থেকে শুরু করে ম্যানগ্রোভ বনের প্রায় সব প্রজাতির গাছ আছে এখানে। বিকেল হতেই চরের গাছগুলো সব বক, পানকৌড়িসহ বিভিন্ন পাখিদের দখলে চলে যায়। পাখিদের ওড়াউড়ি ও কিচিরমিচির শব্দে মুখর হয় আশপাশের এলাকা। সাদা বক বসে থাকায় গাছগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় শাখা-প্রশাখাজুড়ে সাদা ফুল ফুটে আছে। এমন দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা।

দল বেঁধে পাখিগুলো যখন আকাশে ওড়ে, তা দেখে মন ভরে যায় প্রকৃতিপ্রেমীদের। বক, শামুকখোল, পানকৌড়িসহ নাম না-জানা অনেক পাখির কলরবে মুখর থাকে চরের এই বন। কাছে-দূরের অনেক মানুষ এসব পাখি দেখতে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর পাড়ে ভিড় করেন। শিকারিরা রাতের আঁধারে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করেন বলে অভিযোগ আছে।

কয়রার শাকবাড়িয়া নদীতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক অরবিন্দ কুমার বলেন, নদীভাঙন রোধ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কয়রা উপজেলার বিভিন্ন নদীর চর ও বাঁধের পাশে বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে চর বনায়ন গড়ে তোলা হয়েছে। শীতের এই সময়ে প্রচুর পাখি আসে এখানে। পাখির কিচিরমিচিরে মুখর থাকে পুরো চর এলাকা। তবে অসচেতনতা আর লোভের কারণে অনেকে পাখি শিকার করছেন। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে।

উপজেলার মদিনাবাদ গ্রামের কপোতাক্ষ পাড়ের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি পাখি এসেছে। তবে কিছু শিকারি রাতের আঁধারে বিভিন্ন ফাঁদ দিয়ে পাখি ধরে নিয়ে যায়। পাখির বিচরণক্ষেত্র সুরক্ষার দায়িত্ব সবার। এ জন্য প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের শেষভাগে শাকবাড়িয়া নদী চরের বনের কাছাকাছি গিয়ে দেখা যায়, তখনো পাখিদের আনাগোনা খুব একটা নেই। নদীর তীরের বাসিন্দা নিরঞ্জন মণ্ডল জানালেন, পাখিরা বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগেই চলে আসবে।

শাকবাড়িয়ার নদীর তীর ধরে কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করতেই পরিবেশ বদলে যেতে থাকে। ফিরতে থাকে ঝাঁকে ঝাঁকে বক। পাখিদের আগমনী কিচিরমিচিরে চর বনায়নের চারপাশ মুখর হয়ে ওঠে। দেখতে দেখতে পাখিরা দল বেঁধে চরের গাছগুলোতে এসে বসে। কিন্তু গাছে বসেই শান্ত হয়ে যায়নি তারা। চলে ডাকাডাকি।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয় বাসিন্দা নিরঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘সকালে কখন পাখিরা খাবারের খোঁজে উড়ে চলে যায়, তা কেউ জানে না। তবে বিকেল হতেই দলে দলে এদের চরের বনের দিকে আসতে দেখি আমরা। গ্রামের বাসিন্দারা এখন এসব পাখির কিচিরমিচির শুনতে শুনতে রাতে ঘুমাতে যায়।’

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, পাখিগুলোর বেশির ভাগই শীত শেষে পুনরায় নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারে না এক শ্রেণির লোভী শিকারির অত্যাচারে। এটা খুবই দুঃখজনক। পাখি প্রকৃতির অলংকার। এটা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। তবে শুধু আইন দিয়েই পাখি শিকার বন্ধ করা যাবে না, সর্বস্তরের মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। শিকারিদের বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে হবে। তাঁদের ধরে পুলিশে দিতে হবে। যেন কোনো অবস্থাতেই একটা পাখিও কেউ শিকার করতে না পারেন।