র‍্যাব পরিচয়ে ছিনতাইয়ের মামলায় সোনারগাঁ পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

সোনারগাঁ পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হাসান খান
ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাব পরিচয় দিয়ে ২৮৩টি মুঠোফোন ছিনতাইয়ের মামলায় সোনারগাঁ পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ওরফে রবিন ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হাসান খান ওরফে সাজুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার মধ্যরাতে সোনারগাঁ পৌর এলাকার খাসনগর দিঘির পাড়ে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব আলম ছাত্রলীগের ওই দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তার মাহবুবুর রহমান পৌরসভার খাসনগর দিঘির পাড় গ্রামের মৃত মুজিবুর রহমানের ছেলে এবং শাহরিয়ার হাসান গোয়ালদী গ্রামের নাসিরউদ্দিন খানের ছেলে। আজ সোমবার দুপুরে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাঁদের আদালতে পাঠায় পুলিশ।

এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় ছিনতাইয়ের এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ১১ দিন পর গতকাল দুপুরে মো. সুজন নামক এক ব্যবসায়ী বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান, শাহরিয়ার হাসানসহ মোট চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

মাহবুবুর রহমান ও শাহরিয়ার হাসানের সাংগঠনিক পরিচয় প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ বিব্রত উল্লেখ করে তিনি বলেন, সোনারগাঁ পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় ২০২১ সালে একটি গার্মেন্টসের মালামাল লুটের অভিযোগে মামলা হলে সংগঠন থেকে মাহবুবুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে জানা নেই। মাহবুবুর রহমান ও শাহরিয়ার হাসানের বিরুদ্ধে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। আগেও মাহবুবুর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তবে শাহরিয়ার ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। জেলা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। তাঁরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান রাশেদুল।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মো. সুজন নামের ওই ব্যক্তির বাড়ি কুমিল্লা সদর এলাকায়। কুমিল্লা থেকেই তিনি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মুঠোফোন সরবরাহ করেন। ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে এক সহযোগীসহ সুজন ২৮০টি মুঠোফোন নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। গাড়িটি সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় যানজটে পড়লে দুটি মোটরসাইকেলে করে চারজন লোক তাঁদের গাড়ির গতি রোধ করেন। পরে তাঁরা নিজেদের র‍্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে গাড়ি তল্লাশি করতে চান। এ সময় ওই ব্যবসায়ী গাড়ির দড়জা খুললে র‍্যাব পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা তাঁকে মারধর করে ২৮০টি মুঠোফোনসহ গাড়িটি ছিনতাই করে নিয়ে যান।

পরে ছিনতাইকারীদের একজন মোটরসাইকেলে করে ওই ব্যবসায়ীকে সোনারগাঁয়ের বাংলাবাজার এলাকায় নিয়ে গিয়ে আবার মারধর করে তাঁর ব্যক্তিগত তিনটি মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। পরে ছিনতাইকারীরা গাড়িতে করে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর চৌরাস্তায় এনে ছেড়ে দেন। পরে ওই ব্যবসায়ী স্থানীয় লোকজনের কাছে ছিনতাইকারীদের পরিচয় জানতে পারেন।

ছিনতাইয়ের শিকার ওই ব্যবসায়ীর এক স্বজন পরিচয় গোপন রাখার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছিনতাইকারীদের পরিচয় জানার পর আমরা আলোচনার মাধ্যমে মুঠোফোনগুলো উদ্ধার করার চেষ্টা করি। কিন্তু তাঁরা মুঠোফোন ফেরত না দিয়ে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে আমাদের হুমকি দিতে থাকেন। পরে রোববার দুপুরে থানায় মামলা করি।’

সোনারগাঁ থানার একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার দুই ছাত্রলীগ নেতা বেশ কয়েক বছর ধরে সোনারগাঁয়ে ছিনতাই, অপহরণ, জমি দখলসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার আগে বিভিন্ন সময় মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১৪টি ও শাহরিয়ার হাসানের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা হয়।

সোনারগাঁ থানার উপপরিদর্শক পঙ্কজ কান্তি সরকার বলেন, ছিনতাইয়ের অভিযোগে মাহবুবুর রহমান ও শাহরিয়ার নামের দুজনকে গ্রেপ্তারের পর তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে মুঠোফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। মুঠোফোনগুলো উদ্ধার না হওয়ায় ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।