চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি ‘দ্বিতল’ নালার গল্প

চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার ডিসি সড়কে পুরোনো নালা না ভেঙে তার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে আরেকটি নালা। ৪ এপ্রিল দুপুরে। ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম নগরের ডিসি সড়কের নালা নির্মাণ করা হয়েছিল প্রায় চার বছর আগে। এর মধ্যে নালার তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এরপরও নালাটি সংস্কার করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। সংস্কারের পর দুই ফুট উঁচু করা হয়েছে নালাটি। এই কাজ করতে গিয়ে আগের নালার স্ল্যাবও ভাঙা হয়নি। এখন তা ‘দ্বিতল’ নালা হিসেবে রূপ নিয়েছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালে নালাটি সংস্কার করা হয়েছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এই প্রকল্পের সব কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তাই প্রকল্পের আওতায় সংস্কার করা নালা-নর্দমা ও খাল এখনো বুঝে নেয়নি সিটি করপোরেশন।

ডিসি সড়কের নালাটি এখনো প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের আওতায় রয়েছে। সিটি করপোরেশনের সংস্কারকাজে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও ছিল না। নালার দুই দফা কাজে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি সিডিএ ও সিটি করপোরেশন।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরের পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের ডিসি সড়ক এবং এর আশপাশের অলিগলির সড়ক সংস্কারের জন্য ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সড়কের পাশের নালার ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এর কাজ শুরু হয় এবং চলতি মাসে এর কাজ শেষ হয়। ‘দ্বিতল’ নালাটি নির্মাণ করা হয়েছে সড়কের গনি কলোনির পাশে। এর আনুমানিক দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট। আগের নালার চেয়ে অন্তত আড়াই ফুট উঁচু করা হয়েছে নতুন নালাটি। এতে সড়কের আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনা ও অলিগলির সড়কগুলো নিচে নেমে গেছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, আগের করা নালাটির স্ল্যাব রেখেই তার ওপরে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়েছে নতুন নালাটি। নালাটির চারপাশের দেয়াল তুলে দিলেও ওপর থেকে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, আগের স্ল্যাবগুলোও সেভাবে রয়েছে। ফলে আবর্জনা জমে গেলে ওপর থেকে তা পরিষ্কারের কোনো সুযোগ নেই।

স্থানীয় লোকজন বলছে, এই নালা এত উঁচু করার কারণে আশপাশের অধিকাংশ ঘরবাড়ি ও দোকান এই সড়ক থেকে অন্তত আড়াই ফুট নিচে চলে গেছে। পাশাপাশি একটি নালার ওপর আরেকটি নালা জলাবদ্ধতাকে আরও বাড়াবে।

নালার সংস্কারকাজে ‘সহযোগিতার’ অনুরোধ জানিয়ে গত বছরের ২৯ নভেম্বর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালককে চিঠি দিয়েছিলেন সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফরহাদুল আলম। ওই চিঠিতে বলা হয়, পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের ডিসি সড়কসংলগ্ন নালা সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ডিসি সড়কের ধুনির পুল থেকে মিয়ার বাপের মসজিদ সড়ক অংশে খালের জোয়ার-ভাটার প্রভাবে রাস্তায় দুই ফুটের ওপরে পানি ওঠে। তাই সিটি করপোরেশন নিজ উদ্যোগে ডিসি সড়কসংলগ্ন নালা পরিষ্কার করে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প শেষ হওয়ার পর সিডিএর সঙ্গে সমন্বয় করে ডিসি সড়কসংলগ্ন নালা বুঝে নেওয়া হবে।

চিঠি দেওয়া হলেও এই ব্যাপারে নতুন করে সংস্কারকাজ করার জন্য কোনো ছাড়পত্র দেয়নি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ। অনুমোদন ছাড়া এবং নতুন করে সংস্কার করা নালার ওপর আবার নালা নির্মাণের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফরহাদুল আলম। তিনি এই বিষয়ে কথা বলার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

অবশ্য নির্বাহী প্রকৌশলী তাসমিয়া তাহসিনকে মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

নতুন করে সংস্কারের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর (পশ্চিম বাকলিয়া) মোহাম্মদ শহিদুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ডিসি সড়ক পাশের চাক্তাই খাল ও বাকলিয়া এক্সেস সড়কের তুলনায় নিচু। আগে সংস্কার করা হলেও নিচু হওয়ায় পানি জমে থাকত। তাই নতুন করে উঁচু করা হয়েছে। আর আগের কাজটি যেহেতু এখনো বুঝে নেওয়া হয়নি, তাই না ভেঙেই উঁচু করা হয়েছে।

সিটি করপোরেশন কাজ করলেও এ ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরের ছাড়পত্র ছিল না বলে জানিয়েছেন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড়পত্র নেয়নি করপোরেশন। যেহেতু সেখানে একটি প্রকল্প চলমান, তাই সমন্বয় করা প্রয়োজন ছিল। বিষয়টি তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করা হবে।