‘আল্লাহ তুই দেহিস’: জোর করে চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় আরেক আসামি গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় জোরপূর্বক বৃদ্ধের চুল কেটে দেওয়ার মামলা গ্রেপ্তার দুজনকে বুধবার বিকেলে ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় জোর করে বৃদ্ধের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় করা মামলার আরও এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম সুজন মিয়া (৩০)। তিনি তারাকান্দা উপজেলার সাধুপাড়া গ্রামের ওয়াহেদ আলীর ছেলে। তিনি মামলার ছয় নম্বর আসামি। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহ নগরের জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে মামলার ৭ নম্বর আসামি মজলু মিয়া (৫০) গ্রেপ্তার হন।

আরও পড়ুন

এই নিয়ে মামলাটির দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে ময়মনসিংহ নগরের জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে সাত নম্বর আসামি মজলু মিয়াকে (৫০) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি তারাকান্দা উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজার এলাকার প্রয়াত রজব তালুকদারের ছেলে। গ্রেপ্তার দুজনকেই আজ আদালতে তোলা হয়।

মঙ্গলবার রাত ১২টার পর ডিবি পুলিশ মামলার ছয় নম্বর আসামি সুজন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে জানিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তারাকান্দা থানার উপপরিদর্শক আলাল উদ্দিন বলেন, ‘আজ আসামিকে আমরা থানায় নিয়ে আসি। গতকাল আমরা মামলার ৭ নম্বর আসামি মজলু মিয়াকে গ্রেপ্তার করি। দুজন আসামিকে আজ আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে। তাঁদের প্রত্যেককে তিন দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, বাউল ফকিরের মতো দেখতে এক ব্যক্তিকে ধরে তিনজন লোক জোর করে চুল কেটে দিচ্ছেন। বয়স্ক মানুষটি অনেকক্ষণ চেষ্টা করে ছাড়িয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত অসহায় আত্মসমর্পণ করে বলেন, ‘আল্লাহ, তুই দেহিস।’ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

হেনস্তার শিকার ওই ব্যক্তির নাম হালিম উদ্দিন আকন্দ (৭০)। তিনি তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে হালিম ফকির হিসেবেই চেনেন। প্রায় চার মাস আগের ওই ঘটনায় গত শনিবার বিকেলে তারাকান্দা থানায় একটি মামলা করেন হালিম উদ্দিনের ছেলে শহিদ মিয়া আকন্দ। মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি মোট ১২ জনকে আসামি করা হয়।

স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে মাথায় জট ছিল হালিম উদ্দিন আকন্দের। হজরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহ পরান (রহ.)-এর ভক্ত তিনি। আগে পেশায় কৃষক থাকলেও এখন ফকিরি হালে আছেন। গত কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজারে হঠাৎ করে একদল লোক এসে তাঁর মাথার জট, দাড়ি ও চুল জোর করে কেটে দেন। ঘটনার সময় বাধা দিতে গেলে তিনি শারীরিক নির্যাতন ও বলপ্রয়োগের শিকার হন। এ ঘটনার পর থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন হালিম উদ্দিন।

‘হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন ওই চুল কাটার কাজটি করেছিল। সংগঠনের সদস্যরা ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে এসে ওই কাজ করেন। সংগঠনটির প্রধান ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার গামারীতলা গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন আশরাফীকে এ ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি করা হয়।