রাঙ্গুয়াই আমের বিক্রি কম, হতাশ চাষিরা

বিক্রির জন্য রাঙ্গুয়াই আম নিয়ে এসেছেন এক বিক্রেতা। আজ বিকেলে খাগড়াছড়ি বাজারেছবি: প্রথম আলো

দেখতে সুন্দর, স্বাদেও ভালো রাঙ্গুয়াই জাতের আম। পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে এবারও ভালোই ফলন হয়েছে এই আমের। তবে ক্রেতা মিলছে খুবই কম। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা। চাষিদের অনেকেই আম বিক্রি করতে না পেরে বিনা মূল্যে বিতরণ করেছেন। কেউ ক্ষোভ থেকে কেটে ফেলেছেন গাছ।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া এলাকায় সাত বছর আগে রাঙ্গুয়াই আমের একটি বাগান গড়ে তোলেন জুয়েল চাকমা। তাঁর বাগানে ৩৫টি গাছ ছিল। তবে এবার আম বিক্রি করতে না পারার ক্ষোভ থেকে ৩০টি গাছ কেটে ফেলেছেন বলে জানান তিনি। জুয়েল চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, দুই বছর ধরে আম বিক্রি হচ্ছে না। কেউ কিনতে চায় না। বাগানের পরিচর্যায় যে খরচ হয়, তা–ও উঠে আসছে না। তাই ৩০টি গাছ কেটে ফেলেছেন তিনি।

বিক্রি দূরে থাক, গ্রামের লোকজনকে এমনিতে দিলেও কেউ এই আম খেতে চায় না। কেটে নেওয়া গাছের আম এদিক-সেদিক পড়ে থাকলে সেখানে আঁটি থেকে চারা হয়। তখন আবার এসব চারা তুলতে বাড়তি সময় নষ্ট হবে। তাই আম এক জায়গায় জড়ো করে রেখেছি। কারও ইচ্ছা হলে নিয়ে যাবে।
—অলক ত্রিপুরা, বাগানমালিক

খাগড়াছড়ি সদরের গোমরাঘাট এলাকার নিখিল চাকমার রয়েছে ১২৩টি রাঙ্গুয়াই আমগাছ। তিনি বলেছেন, ৫-১০ টাকা কেজিতে আম বিক্রি করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুকুল আসার পর বাগানের পেছনে যে খরচ হয়েছে, তা–ও তোলা যায়নি।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ি বাজারে কথা হয় কমলছড়ি এলাকা থেকে আম বিক্রি করতে আসা কমলিকা চাকমার সঙ্গে। নিজের বাগান থেকে ৫০ কেজি আম বিক্রি করতে নিয়ে আসেন তিনি। কমলিকা বলেন, ৫০ কেজি আমের দাম উঠেছে ৪০০ টাকা। অথচ বাজারে আসতেই খরচ হয়েছে ৭০ টাকা।

খাগড়াছড়ি বাজারে মৌসুমি ফলের ব্যবসা রয়েছে রহমত আলীর। তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে এখন নানা বিদেশি জাতের আমের চাষাবাদ হচ্ছে। এসব আমের কারণে রাঙ্গুয়াই আমের কদর কমেছে। একসময় রাঙ্গুয়াই আমের অনেক চাহিদা ছিল। তবে এই আম একটু আঁশযুক্ত হওয়ায় এখন অনেকে খেতে চান না।

গাছের নিচে পড়ে রয়েছে আম। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি সদরের গোমরাঘাট এলাকা থেকে
ছবি: প্রথম আলো

অজিত চাকমা ও খগেন ত্রিপুরা নামের দুই ফল ব্যবসায়ী জানান, চার মাস আগে পানছড়ির মরাটিলা এলাকায় ২০ হাজার টাকা আগাম দিয়ে এক চাষির রাঙ্গুয়াই আমের বাগান কেনেন তাঁরা। তবে বাজারে চাহিদা না থাকায় এবার বাগানের কোনো আমই আর তাঁরা বিক্রি করতে বাজারে নেননি।

সম্প্রতি মরাটিলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের ওপর থাকা বেশ কিছু আম গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এক পাশে জড়ো করে রাখা হয়েছে কেটে ফেলা কিছু গাছের আম। এ সময় কথা হয় বাগানের মালিক অলক ত্রিপুরা সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিক্রি দূরে থাক, গ্রামের লোকজনকে এমনিতে দিলেও কেউ এই আম খেতে চায় না। কেটে নেওয়া গাছের আম এদিক-সেদিক পড়ে থাকলে সেখানে আঁটি থেকে চারা হয়। তখন আবার এসব চারা তুলতে বাড়তি সময় নষ্ট হবে। তাই আম এক জায়গায় জড়ো করে রেখেছি। কারও ইচ্ছা হলে নিয়ে যাবে’।

বিক্রি হচ্ছে না রাঙ্গুয়াই আম। তাই বাগান থেকে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি সদরের গোমরাঘাট এলাকায়
ছবি; প্রথম আলো

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলায় আমবাগান রয়েছে ৪ হাজার ১৫২ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শুধু রাঙ্গুয়াই জাতের আমের বাগান আছে ৭১০ হেক্টর। খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাছিরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, রাঙ্গুয়াই আম আঁশযুক্ত। মিষ্টতা আম্রপালিসহ কিছু আমের তুলনায় কম। তবে পরিকল্পিত বিপণন না থাকায় এই আমের বিক্রি কমতে পারে। যার কারণে কৃষকেরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।