বগুড়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বগুড়ায় হামলায় নিহত স্বেচ্ছাসেবক লীগে নেতা নাহিদ হাসান
ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ হাসানকে (৩০) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার পর নাহিদ হাসানের বাবা ঝন্টু ব্যাপারী বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলাটি করেন। মামলায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ ও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে আসামি করা হয়েছে। নাহিদ হত্যার কারণ হিসেবে আসামিদের সঙ্গে ‘পূর্বশত্রুতা’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী আজ বুধবার সকালে মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরপরই আসামিরা গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁদের চেষ্টা চলছে।

আজ সকালে উপজেলার মালগ্রাম এলাকায় নাহিদ হাসানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে স্বজনদের আহাজারি চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ তখনো ছিল শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে। স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী সোমা আকতার শোকে পাগলপ্রায়। মায়ের কান্নায় চার ও পাঁচ বছরের দুই শিশুসন্তানও বাবার জন্য কাঁদছে।

এলাকাবাসী জানান, নাহিদ বছর দুয়েক আগে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেটে চাকরি করতেন। তার বাবা ঝন্টু ব্যাপারী মাছ ব্যবসায়ী। রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না নাহিদ। তবে বছর দুয়েক আগে থেকে হঠাৎ স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলার নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা শুরু হয় তাঁর। রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর হয়ে ওঠেন। এরপর মালগ্রাম এলাকায় বাসাবাড়ি নির্মাণে ইট-বালু সরবরাহে নিয়ন্ত্রণ এবং আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের আরেকটি পক্ষের সঙ্গে তাঁর বিরোধ শুরু হয়। এই পক্ষ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আরেক শীর্ষ নেতার সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

আরও পড়ুন

নাহিদ হাসানের একজন বন্ধু প্রথম আলোকে বলেন, মালগ্রাম এলাকায় ইট-বালু সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও শহরের রেলওয়ে হকার্স মার্কেটে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ এবং সুদের কারবারের পাওনা টাকা নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন নাহিদ হাসান। ‘পথের কাঁটা’ সরিয়ে দিতে প্রতিপক্ষরা নাহিদকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

নাহিদের ওই বন্ধু আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে শহরের মালগ্রাম ডাবতলা এলাকায় নাহিদসহ ৮-১০ জন বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছিলেন। রাত সোয়া আটটার দিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ১৫-১৬ জন সন্ত্রাসী অস্ত্র হাতে নাহিদ হাসানের ওপর হামলা করে। এ সময় রামদা দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হাত, পেট ও পা গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। নাহিদকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’

পুলিশ ও নাহিদ হাসানের ঘনিষ্ঠজনেরা বলেন, নাহিদ হাসান হত্যাকাণ্ডের প্রায় দেড় বছর আগে ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মালগ্রাম ডাবতলা এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হাসান ওরফে ওরেঞ্জকে। নাজমুলও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমানের অনুসারী ছিলেন। নাহিদ হাসানের সঙ্গেই তাঁর ওঠাবসা ছিল। পরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নাজমুল হাসান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শুটার রাসেলকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান বলেন, মঙ্গলবার হত্যাকাণ্ডের শিকার নাহিদ হাসান বগুড়া শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া গত বছর একই এলাকায় প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত নাজমুল হাসান জেলা কমিটির সহসাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা দুজনই আমার সঙ্গেই থাকতেন। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ তাঁদের দুজনকেই কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেউ নন। তাঁরা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।’

বগুড়া শহরের স্টেডিয়াম ফাঁড়ির পরিদর্শক হরিদাস মণ্ডল বলেন, মামলায় ‘পূর্বশত্রুতার জের’ উল্লেখ করা হলেও প্রাথমিক তদন্তে হকার্স মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে বিরোধ, মালগ্রাম এলাকায় ইট-বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ সুদের কারবারসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধের বিষয়টি উঠে এসেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।