চুরির অপবাদে শিশুকে শিকলে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ

নেত্রকোনা জেলার মানচিত্র

নেত্রকোনার মদন উপজেলায় চুরির অপবাদ দিয়ে ১১ বছর বয়সী একটি শিশুকে শিকলে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। আজ রোববার সকালে উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের রুদ্রশ্রী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ওই শিশুকে চুরির অভিযোগে ঘরে আটকে রাতভর নির্যাতন করা হয়। আজ সকালে তার মাথা ন্যাড়া করে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখেন ওই গ্রামের সুমন মীর (২১) নামের এক তরুণ। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যের হস্তক্ষেপে শিশুটি মুক্তি পায়।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার রুদ্রশ্রী গ্রামের কাজল মীরের ছেলে সুমন মীর (২১) গতকাল সকালে তাঁর ঘরের একটি বাক্সে সাড়ে ১১ হাজার টাকা রাখেন। তখন সেখানে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও প্রতিবেশী একটি শিশু উপস্থিত ছিল। বিকেলে হাওর থেকে ফিরে সুমন বাক্সের টাকা না পেয়ে ওই শিশুকে সন্দেহ করেন। সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে তাকে পেয়ে টাকার কথা জিজ্ঞাসা করেন সুমন। কিন্তু সে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করলে সুমন তাকে ঘরে নিয়ে রাতভর নির্যাতন করেন। আজ সকালে শিশুটির মাথা ন্যাড়া করে বাড়ির সামনে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখেন তিনি। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সুলতান উদ্দিন শিশুটিকে মুক্ত করেন।

ওই শিশু সাংবাদিকদের বলে, সে কোনো টাকা চুরি করেনি। অহেতুক সন্দেহ করে গতকাল সন্ধ্যা থেকে সুমন তাকে আটকে রেখে মারপিট করেছেন। সকালে মাথার চুল কেটে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। ইউপি সদস্য সুলতান তাকে উদ্ধার করেন। সে এ ঘটনার বিচার চায়।

ওই শিশুর বাবা বেশির ভাগ সময় কাজের সন্ধানে বাইরে থাকেন। সে তার চাচার কাছে থাকে। ঘটনার দিন তার বাবা বাড়িতে ছিলেন না। ওই শিশুর চাচা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাতিজার বিরুদ্ধে টাকা চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সুমন নির্যাতন করেছে। সুমনের পরিবার এই অন্যায়ে বাধা দেয়নি। আমরা গরিব মানুষ, এই ঘটনার শাস্তি চাই।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুমন মীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল সকালে ওই শিশুর সামনে সাড়ে ১১ হাজার টাকা গুনে বাক্সে রাখি। আমার টাকা সে চুরি করেছে। এ জন্য তাঁকে শাস্তি দিয়েছি। কিন্তু এখনো আমার টাকা উদ্ধার করতে পারিনি।’

ইউপি সদস্য সুলতান উদ্দিন বলেন, টাকা চুরি করার অভিযোগে ওই শিশুর মাথা ন্যাড়া করে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন সুমন। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে তার শিকল খুলে দেন। সুমন কাজটা খুবই খারাপ করেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহম্মদ ফেরদৌস আলম প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে ওই এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে সুমন মীরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।