শহীদ এসি রবিউলের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগিতা চাইলেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা

গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় শহীদ পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল করিমের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শোকমিছিল। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রাম এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় শহীদ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিমের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার সকালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় শোকমিছিল ও স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।

আজ সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের কাটিগ্রাম বাজার থেকে শোকমিছিলটি বের করা হয়। এতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য রবিউলের প্রতিষ্ঠিত ব্লুমস বিশেষায়িত বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও বন্ধুরা অংশ নেন। মিছিলটি কাটিগ্রাম কবরস্থানের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে তাঁরা রবিউলের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।

মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচির অংশ হিসেবে আটিগ্রাম ইউনিয়নের বাসাই গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ব্লুমস বিশেষায়িত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্মরণসভা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জি আর শওকত আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুল আলীম খান, ব্লুমসের সদস্যসচিব ও শহীদ রবিউল করিমের ছোট ভাই শামসুজ্জামান শামস, সহসভাপতি ইকবাল হোসেন, পরিচালক (অর্থ বিভাগ) মো. গোলাম সারোয়ার, আজীবন সদস্য মো. সানোয়ার হোসেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, রাজবাড়ী সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক রকিবুল হাসান খান, রবিউলের সহধর্মিণীর বড় ভাই চিকিৎসক কামাল উদ্দিন প্রমুখ।

আরও পড়ুন

এ সময় রবিউলের ছোট ভাই শামসুজ্জামান বলেন, মানুষের জন্য দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে রবিউল করিম বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য এ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি একটি বৃদ্ধাশ্রম ও বিশেষায়িত শিশুদের জন্য আবাসিক ভবন করতে চেয়েছিলেন। জঙ্গিদের হাত থেকে মানুষদের বাঁচাতে গিয়ে তিনি শহীদ হয়েছেন। তাঁর আত্মত্যাগ আমাদের জন্য গর্বের, গৌরবের। তাঁর যেসব কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে, সেগুলোকে পূর্ণ করতে হবে। তাঁর কাজগুলোকে ভালোবাসলেই তাঁর প্রতি ভালোবাসা জানানো হবে। স্কুলটি পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে। এ জন্য সরকারি–বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।

রবিউল করিমের বন্ধু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, ‘রবিউল করিম স্বপ্নবাজ মানুষ ছিলেন। তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে ভাবতেন। সেই ভাবনা থেকেই তিনি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। এমনকি তিনি মানুষের জন্য নিজের জীবনও বিলিয়ে দিয়েছেন। আমাদের তাঁর স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’

রাজবাড়ী সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক রকিবুল হাসান খান বলেন, যাঁরা নিজের স্বার্থের চেয়ে মানুষের স্বার্থকে বড় করে দেখেন এবং মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেন, তাঁরাই দেশপ্রেমিক। রবিউল সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, যা তিনি জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন। তিনি বিশেষায়িত শিশু-কিশোরদের জন্য স্কুল গড়েছেন। স্কুলটির পরিচালনায় সবাইকে যার যার অবস্থা অনুযায়ী এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুন

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুল আলীম খান রবিউলের সঙ্গে পরিচয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) থাকার সময় রবিউলের সঙ্গে পরিচয় হয়। রবিউল এ স্কুলের স্বপ্ন দেখেছিলেন। পরে তা প্রতিষ্ঠা করেন। একটি ছোট ঘর থেকে ধীরে ধীরে এখানে ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। তবে বর্তমানে বিদ্যালয় পরিচালনায় বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করতে কষ্ট হচ্ছে। তবু শিক্ষকেরা বিদ্যালয়টি পরিচালনা করছেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের এ বিদ্যালয় পরিচালনায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই মিলে স্কুলের পাশে দাঁড়িয়ে এটি এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলেই রবিউলের স্বপ্ন বেঁচে থাকবে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হওয়ার সময় রবিউল করিম ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮১ সালের ৩০ নভেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের কাটিগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।